কোটা পদ্ধতির সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে প্রায় ছয় ঘণ্টা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে রাখার পর চাকরিপ্রত্যাশী হাজারো তরুণকে লাঠিপেটা, রাবার বুলেট ও মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এতে শতাধিক আহত হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। ব্যাপক পুলিশি অ্যাকশনের প্রতিবাদে আজ সোমবার থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
তবে শাহবাগে পুলিশের অ্যাকশনে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হলেও একই সময় দেশের অন্যান্য জেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে জেলাপর্যায়ের চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ আন্দোলনকারীরা। রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে কয়েক শ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী অবস্থান করছিল।
গতকাল রবিবার দুপুর আড়াইটা থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করার সময় আন্দোলনকারীদের পুলিশ সরে যেতে বললেও তারা অনড় ছিল। জাতীয় সংসদের অধিবেশন থেকে এই আন্দোলনের দাবির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা অবরোধ চালিয়ে যাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পরই আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। রাত ৮টার দিকে পুলিশের ব্যাপক অ্যাকশনে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা।
পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটায় আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি কর্তব্যরত কয়েকজন সংবাদকর্মীও আহত হয়েছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অন্তত পাঁচজনকে আটক করেছে। তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
একই দাবিতে গতকাল ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করেছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। রংপুরে গণপদযাত্রা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রথম কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের সরানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এরপর ব্যাপকভাবে লাঠিপেটা শুরু হয়। পৌনে ৮টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে পুলিশ একযোগে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একই সঙ্গে চলে লাঠিপেটা। এ সময় আন্দোলনকারীরা চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থান নেয়। শাহবাগ মোড়ের দক্ষিণ পাশে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের উল্টো দিকে শাহবাগ থানার ফটকের সামনে দাঁড়িয়েও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়সংলগ্ন পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশি হামলার মুখে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের দিকে দৌড় দেয়। লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে গণগ্রন্থাগারের সামনে ঢাকা ট্রিবিউনের সংবাদকর্মী ফাহিম রেজা নূর, প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফুর রহমান, ইউএনবির প্রতিনিধি ইমরান হোসেন, বাসসের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান রেজা এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি তারেক হাসান নির্ঝর ও কালের কণ্ঠ’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মেহেদী হাসান আহত হন।