বিরোধী জোটের আপত্তির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার চার দিনের মাথায় পুনঃতফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির আলোকে তফসিল পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপিসহ বিভিন্ন জোট ও রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় কমিশনের স্বস্তির কথাও প্রকাশ করেন তিনি।
নতুন সূচি অনুযায়ী ভোট নেওয়া হবে ৩০ ডিসেম্বর রোববার। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর বুধবার। মনোনয়ন বাছাই করা হবে ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর। প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করতে পারবেন ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর।
পুনঃতফসিলে ভোটে অংশ নেওয়া দল ও প্রার্থীরা প্রচারের সুযোগ পাচ্ছেন ২০ দিন। আইন অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামার সুযোগ নেই। তফসিল ঘোষণার পর সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট পৃথক চিঠি দিয়ে তা পেছানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল।
পুনঃতফসিলের পর ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, তাদের দাবি ছিল নির্বাচন এক মাস পেছানোর। নতুন এ সূচি ঘোষণার পরও তারা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন। তবে যুক্তফ্রন্টের শীর্ষ নেতা অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী পুনঃতফসিল হওয়ায় ইসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন সূচির বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। অবশ্য তারা আগেই জানিয়েছিলেন, ইসি ভোট পেছালে তারা আপত্তি করবেন না।
এর আগে ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি কে. এম. নুরুল হুদা ২৩ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তফসিল ঘোষণা করেছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১৯ নভেম্বর।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একাধিকবার তফসিল পিছিয়ে ভোট নেওয়া হয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি উঠলেও তা আমলে নেয়নি তৎকালীন কাজী রকিব উদ্দীনের কমিশন। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় দশম সংসদ। নির্বাচনকে ঘিরে তখন দেশজুড়ে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। দশম সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। তার আগের ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এবার তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পেছানোর দাবি জানায়। ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়ার পরও ইসি তাদের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করে।
গত রোববার ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলন থেকে জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তারা আবারও নির্বাচন পেছানোর দাবি জানান।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষ অলি আহমদও জানান, তারা ভোটে অংশ নেবেন। সোমবার সন্ধ্যায় ইসি সচিব নির্বাচনের নতুন সূচি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এর আগে সকালে ইসি কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে ইসি আয়োজিত ইভিএম মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে সিইসি তফসিল পুনর্নির্ধারণের কথা জানিয়ে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট নেওয়ার তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছে। আর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় পাল্টিয়ে ২৮ নভেম্বর করা হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় কমিশনের স্বস্তির কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কমিশন তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিল। কারণ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে- এমন বিশ্বাস কমিশনের ছিল। তাদের দাবির আলোকে ইসি তফসিল পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে সোমবার বিকেলে সমকালের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সংশ্নিষ্ট জোটবদ্ধ হওয়ার সময় পাবে। যদিও প্রায় সব দলই চিঠি দিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। কেউ যদি পুনরায় সংশোধন করতে চায় সে সুযোগও পাবে। তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে কোন দল কোন জোটে যাবে তা ইসিকে জানানো বাধ্যতামূলক।