প্রেসিডেন্টের একটি ভাষণ। সাংবিধানিক পরিবর্তনের রূপরেখা ঘোষণা। তার কিছুক্ষণ পরই প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রিসভার পদত্যাগ। নিযুক্ত হলেন নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়ায় বুধবার এভাবেই আকস্মিক এবং নাটকীয় কিছু পরিবর্তন ঘটেছে।
সরকারের মন্ত্রীরা আগেভাগে কিছুই জানতেন না এ ব্যাপারে। কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মন্ত্রীদের কোন ধারণাই ছিল না তাদের এভাবে পদত্যাগ করতে হবে। এসবের অর্থ কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, ভ্লাদিমির পুতিন তার ক্ষমতা জারি রাখার জন্য এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার এমন কিছু সাংবিধানিক পরিবর্তনের রূপরেখা তুলে ধরেন - যার ফলে ২০২৪ সালে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরও রুশ প্রশাসনে তার প্রভাব বজায় থাকবে।
পুতিন তার বার্ষিক ‘স্টেট অব দি নেশন’ ভাষণে বলেন, ভবিষ্যতে রুশ প্রেসিডেন্টদের দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকা উচিত হবে না এবং পার্লামেন্টের ক্ষমতাও বাড়ানো উচিত। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় যে কাউন্সিলের প্রধান ভ্লাদিমির পুতিন নিজে - তার ভুমিকাও জোরদার করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
এ ভাষণের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এসব পরিবর্তনের পথ সুগম করার জন্য রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভিয়েদেভের নেতৃত্বে পুরো রুশ সরকার পদত্যাগ করে। ক্রেমলিন থেকে কর বিভাগের পরিচালক মিখাইল মিশুস্তিনকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
বিবিসির বিশ্লেষক পল কারবি বলছেন, এটা স্পষ্ট যে ৬৭ বছর বয়সী পুতিন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট আছেন গত ২০ বছর ধরে এবং বর্তমান আইন অনুযায়ী আর চার বছর পরেই তার বিদায় নেবার কথা। পুতিন তাই আগে থেকে রাশিয়ায় তার ক্ষমতা ধরে রাখতে কাজ শুরু করেছেন।
দিমিত্রি মেদভেদের ভূমিকা কী?
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পর মেদভেদকে এখন রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি প্রধান করা হয়েছে। তিনি এখন কাজ করবেন অনেকটা লোকচক্ষুর আড়াল থেকে। কার্নেগি মস্কো সেন্টারের আলেক্সান্ডার বাউনভ বলেন, ‘এটা হচ্ছে সোনালি প্যারাসুটের মতো। তিনি রিজার্ভ বেঞ্চে আছেন, কারণ এই নিরাপত্তা কাউন্সিল হচ্ছে পুতিনের ঘনিষ্ঠতম অন্দরমহল - তার নিজের মিনি-সরকার।’
ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির অজনপ্রিয় নেতা মেদভেদ মাঝখানে চার বছর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কারণ তখন পুতিনের প্রেসিডেন্ট পর পর দুই মেয়াদ পুরো হয়ে গিয়েছিল। তাই তাকে এক মেয়াদের জন্য তার বিশ্বস্ত ব্যক্তি মেদভেদের হাতে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
সে সময় মেদভেদ ছিলেন প্রেসিডেন্ট আর পুতিন প্রধানমন্ত্রী। চার বছর পরে আবার পুতিন ফিরে আসেন প্রেসিডেন্ট পদে। এখন ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য আবার ঠিক সেই রকম একটা সময় আসছে। কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট পুতিন আগের মত প্রধানমন্ত্রী হয়ে পেছনের সিটে বসে থাকার পরিকল্পনা করছেন না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই চতুর্থ টার্মই হবে তার শেষ মেয়াদ বলে মনে হচ্ছে।
পুতিন তাহলে কী চান?
তার কথা শুনে মনে হয়, রুশ পার্লামেন্টের হাতে আরো বেশি ক্ষমতা আসবে, তারাই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে এবং মন্ত্রিসভা অনুমোদন করবে। তবে সেটা এখনি হচ্ছে না এবং কতটা ক্ষমতা পার্লামেন্ট পাবে তাও স্পষ্ট নয়। পুতিন সংবিধান পরিবর্তনের ওপর একটা ভোটাভুটির আভাস দিচ্ছেন। ১৯৯৩ সালের পর এটাই হবে এ ধরনের প্রথম ভোট।
প্রস্তাব করা হচ্ছে যে, স্টেট কাউন্সিলকে এখন সরকারের একটি আনুষ্ঠানিক সংস্থা হিসেবে সংবিধানে স্থান দেয়া হবে। বর্তমানে যা উপদেষ্টা পরিষদের মতো। এতে আছেন ৮৫ জন আঞ্চলিক গভর্নর, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা। এর সদস্য এত বেশি যে কাউন্সিলের বৈঠকের সময় ক্রেমলিনের অর্ধেকই পূর্ণ হয়ে যায়।
কিন্তু পুতিন স্পষ্টতই এই কাউন্সিলের ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে একটা পরিকল্পনা করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, তিনি হয়তো হতে পারেন এই পরিষদের একজন নতুন এবং ক্ষমতাশালী নেতা। বাউনভ বলছেন, ‘পুতিন চাচ্ছেন এই কাউন্সিলকে এমন করে গড়ে তুলতে যা হবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। আর এর প্রধান হিসেবে পুতিনের অবস্থান হতে পারে প্রেসিডেন্ট পদেরও ওপরে।
বিবিসির রুশ বিভাগের সেরগেই গোরিয়াশকো বলছেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় থাকতে চান। প্রশ্নটা হচ্ছে কীভাবে, কী ভুমিকায়। আমরা প্রায় নিশ্চিত যে তিনি ২০২৪ সালের পর প্রেসিডেন্ট থাকবেন না। হয়তো তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হিসেবেও থাকতে পারেন।’
বুধবারের ঘটনার পর বিশ্লেষক কনস্টান্টিন এগার্ট টুইটারে মন্তব্য করেছেন যে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং ২০২১ সালের মধ্যেই নতুন কাঠামো এবং নতুন পুতিনকে দেখা যাবে।
পুতিনের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আলেক্সিই নাভালনি বলছেন, সাংবিধানিক পরিবর্তনের কথাবার্তায় পুরোনো সোভিয়েত-স্টাইল রাজনীতি ফিরে আসছে এবং এ নিয়ে যে ভোট হবে তা হবে একটা জালিয়াতি।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com