পিরোজপুরে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এহসান গ্রুপের সকল স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন জেলা জজ আদালত। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে (৯ জুন) পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ মহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি ঢাকার তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তের ও তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন আদালত।
পিরোজপুর আদালতের পিপি খান মো. আলাউদ্দিন জানান, তদন্ত রিপোর্টে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি রাগীব আহসানসহ গ্রেপ্তার ৭ জন ও তাদের নিকটাত্মীয়দের প্রতারণা অপরাধলব্ধ স্থাবর সম্পত্তি ও তার ওপর নির্মিত স্থাপনা ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ১শত ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও প্রতিষ্ঠানের নামে বহু সম্পদের মালিক হয়েছে। এই মামলায় এজাহারনামীয় আসামিদের ও তাদের সকল নিকটাত্মীয়ের স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য অর্থের উৎস গোপন করা হয়। মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এর ১৪৩ ধারা মোতাবেক রাগিব আহসান গংদের নামের অনুকূলে ৪০টি দলিল এবং রাগীব অহসান, তার ভাই মো. আবুল বাশার, খাইরুল ইসলাম, শামীম হাসান, মো. মাহমুদুল হাসান এবং রাগীব আহসানের স্ত্রী সালমা আহসানের নামে মোট ৫টি বিক্রয়কৃত দলিল ও ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরো জানা যায়, হালাল ব্যবসায় বিনিয়োগের নামে হাজার হাজার মানুষকে নিঃস্ব করে এহসান গ্রুপের কর্ণধার মুফতি রাগীব আহসানসহ মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা নিয়ে তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ৯টি প্রতিষ্ঠান, নূর-ই-মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, পিরোজপুর বস্ত্রালয়, আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, মক্কা এন্টারপ্রাইজ, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স, সাহাবা হজ কাফেলা ও এহসান সাউন্ড সিস্টেম নামক প্রতিষ্ঠান খুলে তাতে বিনিয়োগ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও মামলার আসামিরা নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা সরিয়েছেন। তারা প্রতারণার মাধ্যমে ১০১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন ও ভোগবিলাসে ব্যায় করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ লঙ্ঘন করেছেন।
গত বছর এহসান গ্রুপের অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৯টি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান ও তার স্ত্রী সালমা আহসানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে।
এসব মামলায় পুলিশ রাগীব আহসান, তার ভাই আবুল বাশার, খাইরুল ইসলাম, শামীম হাসান ও মাহমুদুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
এদিকে, প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসা গ্রাহকরা বিনিয়োগের অর্থ ফিরে পেতে এখনও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মূল আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও গ্রাহকরা কবে তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাবেন তা নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে রাগীব আহসান ইমামতির পাশাপাশি একটি এমএলএম কম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেন। সেখান থেকে প্রতারণার কৌশল রপ্ত করে অর্থ আত্মসাতের ব্যবসায় নামেন তিনি। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ‘শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ’ এর বিষয়টি ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন তিনি। এছাড়া তিনি ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের আড়ালে ব্যবসায়ীক প্রচারণা চালান। মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া কোটি কোটি টাকা নিজের এবং আত্মীয় স্বজনদের নামে করা প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন।