পিকআপের চাপায় নিহত ৫: লাইসেন্স ছিল না সেই চালকের

:
: ২ years ago

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় পাঁচ ভাই নিহতের ঘটনায় চালক সহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। সাইফুল ভারী যানবাহন চালালেও তার বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযানে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে সবজিবোঝাই পিকআপ ভ্যান নিয়ে রওনা হয় সাইফুল। রাস্তায় বেশি কুয়াশা থাকলেও সাইফুল বেপরোয়া গতিতে পিকআপ ভ্যান চালাচ্ছিল। কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে মালুমঘাট বাজারের নার্সারি গেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারত ব্যক্তিদের দূর থেকে দেখতে পায়নি চালক। কাছাকাছি এসে দেখতে পেলেও বেশি গতি থাকায় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেনি সে। দুর্ঘটনার সময় পিকআপ ভ্যানে এর মালিকের ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল ছিল।

গাড়িটি ৬৫-৭০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। চালক গাড়ি থামানোর জন্য ব্রেক করলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ১০০ ফুটের মতো সামনে চলে যায়। এতে চাপা পড়ে পাঁচ ভাই। পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে এলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সাইফুল।

সাইফুল মালুমঘাট বাজার এলাকায় গাড়ি থামিয়ে মালিক মাহমুদুল করিমকে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানায়। গাড়ির মালিক তাকে পিকআপটি পরবর্তী কোনো এক স্টপেজে রেখে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে। মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইফুল ডুলাহাজরায় পিকআপটি রাখে এবং লোকাল বাসে করে চকরিয়া গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করে। সাইফুলকে ন্যূনতম এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দেয় মাহমুদুল। সাইফুল প্রথমে তার পূর্ববর্তী চাকরিস্থল বান্দরবানের লামার রাবার বাগানে আত্মগোপন করে। পরে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসে।

পিকআপ ভ্যানের মালিক মাহমুদুল করিম সবজি পরিবহনের ব্যবসা করে। চকরিয়ার সবজির আড়ৎ থেকে কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী এলাকায় সবজি সরবরাহ করে সে। তার ছেলে তারেক সবজি সরবরাহের তদারকি করে এবং ভাগিনা রবিউল তারেকের সহযোগী। ২০১৬ সালে পিকআপটি কেনা হয়েছিল। মূলত সবজি পরিবহনের কাজেই পিকআপটি ব্যবহার করা হতো। পিকআপের ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন এবং রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ। দুর্ঘটনার পর পিকআপের মালিক, তার ছেলে তারেক ও ভাগিনা রবিউল আত্মগোপনে আছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাটে পিকআপের চাপায় চার সহোদর ভাই অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫) চম্পক সুশীল (৩০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পিকআপ ভ্যানের চাপায় আহ আরেক ভাই স্বরণ সুশীল (২৪)।

নিহতদের বাবা সুরেশ চন্দ্র সুশীল বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ হিসেবে পূজা শেষ করে ৯ ভাই-বোন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট বাজারের কাছে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষারত ছিলেন। এ সময় পিকআপ ভ্যান তাদের চাপা দেয়।

র‌্যাব আর জানিয়েছেন, সাইফুলের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও দুই বছর ধরে সে পিকআপ, চাঁন্দের গাড়ি ও ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালাচ্ছিল। দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ আগে সে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরির ভিত্তিতে পিকআপ ভ্যানটি চালানো শুরু করে। আগে সে বান্দরবানের লামাতে রাবার বাগানে চাকরি করত।