জীবন যায় যাক তবুও বলেন, কবির ভাই পত্রিকাটি ঠিক মতো রাখিয়েন। এরপর আর হুঁশ নেই। হুঁশ হলে বলেন, আমার পত্রিকা বিক্রি করে কে? আর একটু ভালো হলে হাসপাতাল বেড থেকে নেমে বলেন, পত্রিকা বিক্রি করতে হবে। আমার সব গ্রাহক নাহলে ছুটে যাবে। হাসপাতাল ছেড়ে দীর্ঘ দুই মাস ব্যাটারিচালিত আটো রিকশাযোগে গ্রাহকের কাছে পত্রিকা পৌঁছান। আর একটু ভালো হলে অন্যের ওপর ভর দিয়ে পুরো শহর ঘুরে ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করেন।
নাম রাজিব। বাড়ি যে শহরে পত্রিকা বিক্রি করেন তার চেয়ে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আলীগাঁও গ্রামে। রাজিব প্রতিবন্ধী। সকাল ১০ টায় শহরে আসেন। রাত অনুমানিক ১ টায় বাসায় ফেরেন। খাওয়া-দাওয়া সবই বাজারে বা কর্মস্থলে। মাথা গরম হলেই যেখানে পুকুর দেখেন সেখানে পত্রিকাগুলো রেখে পোশাক পরিহিত অবস্থাই নেমে গোসল ছেড়ে নিতেন। গায়েই পোশাক শুকিয়ে যেত। হেঁটে বা দৌড়ে পত্রিকা বিক্রি করার ছিল তার অভ্যাস। আঞ্চলিক পত্রিকা বিক্রি শেষে দুপুর ১টার দিকে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। যখনই বাস আসে তখনই দৌড়ে বাস থেকে জাতীয় পত্রিকার বান্ডিল নামান।
প্রতিদিনের ন্যায় গত বছরের ৩ নভেম্বর দুপুর ১ টার দিকে বাসস্ট্যান্ড থেকে পত্রিকার গাইড রিকশাযোগে গন্তব্যস্থান কাসেম হাজী সুপার মার্কেট নিয়ে আসার পথে পেছন থেকে চরফ্যাশনমুখী একটি বোরাক তার রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি সড়কের মাঝখানে পড়ে গেলে ওই যাত্রী বোঝাই বোরাকটি তার দুই পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। এতে তার দু পা ভেঙে যায়।
পরে তাকে চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা পুরোপুরি শেষ হতে না হতে পত্রিকা বিক্রি করতে ছুটে আসেন রাজিব। দীর্ঘদিন পত্রিকা বিক্রি বন্ধ থাকলেও তিনি এখন সেই আগের মতো পত্রিকা গ্রহকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
রাজিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তাহবিলের ২০ হাজার টাকার চেক পেয়েছি। এ ছাড়া আর কেউ আমাকে সহযোগিতা করেনি।