সুরাইয়া জাহান (১৬)। শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বিশেষ কৌশলে তৈরি করা বেঞ্চের ওপর তার পরীক্ষার খাতা রাখা হচ্ছে। আর সেই খাতায় সে ডান পায়ের দুই আঙুলে রাখা কলম দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার এ দৃশ্য দেখা যায় শেরপুর আফছর আলী আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। সুরাইয়া সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় গ্রামের মো. সফির উদ্দিনের মেয়ে। আর সফির উদ্দিন সদর উপজেলার আন্ধারিয়া সুতিরপাড় দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুরাইয়ার দুটি হাতই বাঁকা ও শক্তিহীন। ঘাড়ও খানিকটা বাঁকা। সে মাথা সোজা করে দাঁড়াতেও পারে না। হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। এরপরও লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ সুরাইয়ার। তাই তার বাবা সফির উদ্দিন আর মা মুর্শিদা ছয় বছর বয়সে সুরাইয়াকে আন্ধারিয়া সুতিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করেন। ২০১২ সালে সে জিপিএ ৩ দশমিক ৭৫ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে। পরে ভর্তি হয় আন্ধারিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। ২০১৫ সালে জিপিএ-৪ পেয়ে জেএসসি পাস করে। এ বছর ওই বিদ্যালয় থেকেই সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
সুরাইয়ার বাবা সফির উদ্দিন বলেন, ‘তিন মেয়ের মধ্যে সুরাইয়া বড়। জন্ম থেকেই সে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তাকে যাতে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে সে যেন সমাজের বোঝা না হয়, সবার কাছে এই দোয়া চাই।’
বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ে পরীক্ষা চলার সময় ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একটি বেঞ্চের নিচের অংশে বিশেষ কায়দায় একটি কাঠ লাগানো হয়েছে। সেই কাঠের ওপর খাতা রেখে ডান পা দিয়ে লিখছে সুরাইয়া। প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী হিসেবে সে ৩০ মিনিট সময় বেশি পায়। কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক মল্লিক আনোয়ার হোসেন এই প্রতিবন্ধীর খোঁজখবর নেন ও বোর্ডের নিয়মানুযায়ী তার প্রাপ্য সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে কেন্দ্রসচিবকে নির্দেশ দেন।
সুরাইয়ার সহপাঠী নাজমুন্নাহার বলে, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়ার প্রতি ভীষণ আগ্রহ সুরাইয়ার। অসুস্থ না হলে সে নিয়মিতভাবে স্কুলে উপস্থিত থাকত এবং ক্লাসে শিক্ষকদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনত। তার মনের জোর অনেক।’
জানতে চাইলে সুরাইয়া বলে, ভালো ফলের আশা তার। লেখাপড়া শিখে স্বনির্ভর জীবনযাপন ও বড় অফিসার হতে চায় সে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আফছর আলী আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন বলেন, সুরাইয়া প্রতিবন্ধী হলেও শুধু মনের জোরে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের আরও সহযোগিতা করা হলে ভবিষ্যতে তারা দেশ ও সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।