??????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????

পুনর্বাসনের পাকা ঘরের চাবি বুঝে পেল পায়রা বন্দর নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের মালিকরা। প্রথম পর্যায়ের ১১৪টি পরিবারকে পুনর্বাসনে প্যাকেজ-১ এর ঘরগুলো হস্তান্তর করা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সোয়া ১১টায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বাড়িহারা মানুষগুলোর স্বপ্নের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ নিশ্চিত করলেন। স্বপ্নের এই বাড়ির চাবি বুঝে পেয়ে সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে পূর্ণ হলো। দরিদ্র-হতদরিদ্র জেলে-কৃষকসহ হাইলা-কামলা শ্রেণির মানুষগুলে পাকা ঘরের মালিকানা বুঝে পেল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম প্যাকেজের ঘর উদ্বোধন করায় মানুষগুলো যারপরনাই খুশি হলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে কেউ ভূমিহীন হয়নি। একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দেশের মানুষের মৌলিক সমস্যা বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্যসহ সবকিছু সমাধান করছেন। ওই অঞ্চলে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প গড়ে তোলার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করেছিলেন। ভারতের সাথেও তিনি সমুদ্রসীমা নির্ধারনের জন্য আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। জাতির পিতা প্রথম সমুদ্রসীমা আইন প্রনয়ন করেন। তিনি বলেন, আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে।
রয়েছে অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দর। এসব বন্দরের জন্য জাতির পিতা ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া তাদের ড্রেজার সংগ্রহে কোনো মনোযোগ ছিল না।
পায়রার এই প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার পাঁচ শ’ পরিবারকে ১৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে পুনর্বাসনের কাজ চলছে। যার প্রথম প্যাকেজের আধুনিক সুবিধা সংবলিত বাড়ি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় পায়রা প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পিপিএম, উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম রাকিবুল আহসান, পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
পুনর্বাসিত পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন মোসাম্মৎ হেনা বেগম ও ফোরকান প্যাদা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুদৃশ্য; দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প এলাকা। প্যাকেজ এক এর অধীনে ১৫ একর জমিতে ভূমি উন্নয়নের পরে সুদৃশ্য পাকা একতলা বাড়িগুলো নির্মিত হয়েছে। ১১৪টি বাড়ির মধ্যে এ টাইপের ৩৬টি এবং বি টাইপের রয়েছে ৭৮টি।
চার কাঠা জমির ওপরে এ টাইপ এবং তিন কাঠা জমিতে বি টাইপের একেকটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। সারিবদ্ধভাবে করা ঘরগুলো দেখলে যে কারো ভালো লাগবে। প্রত্যেকটি বাড়িতে তিনটি বেডরুম, দুইটি বাথরুম, একটি কিচেন, একটি বারান্দা রয়েছে। যার মধ্যে সংযুক্ত বাথরুমসহ একটি মাস্টার বেডরুম রয়েছে। প্রত্যেক চারটি বাড়ির জন্য একটি সেপটিক ট্যাংক ও একটি সোক ওয়েল রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ছাদে রিজার্ভ ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। নামাজের জন্য সুউচ্চ মিনার সংবলিত ঈদগাহসহ দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
যেখানে এক সঙ্গে পৌনে তিন শ’ মুসল্লী জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। এই প্যাকেজের বাসীন্দাদের জন্য দুইটি গভীর নলকূপ ও একটি ভূ-গর্ভস্থ জলাধারসহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরসিসি ও ইটের গভীর- অগভীর ড্রেনেজ সিস্টেম করা হয়েছে। ১৬, ১৮ ফুট এবং ২৪ ফুট প্রশস্থ অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। করা হয়েছে পাকা ঘাটলাসহ পুকুর। ১০ কক্ষ বিশিষ্ট মার্কেট করা হয়েছে।
রয়েছে স্কুল কাম কমিউনিটি ক্লিনিক। মাছ বাজারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছাড়াও শাকসবজি বিক্রির উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে। রয়েছে খেলার মাঠ। একটি কবরস্থান। বাড়ির সামনে পরিবেশ বান্ধব সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে। গার্ডেনিং এর জন্য খালি স্পেস রাখা হয়েছে। এক কথায় কি নেই। যা করা হয়নি এই পুনর্বাসন প্রকল্পে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ই ইঞ্জিনিয়ারিং প্যাকেজ এক এর নির্মাণ কাজ করেছে। ইতোমধ্যেই এসব পুনর্বাসিত মানুষের কর্মদক্ষতার উন্নয়নে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সেলাই, হাঁস-মুরগি , গবাদিপশু পালন, ড্রাইভিং, বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ ২২টি ট্রেডের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
পায়রায় ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ৪২০০ পরিবারের একজন করে ৪২০০ জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ট্রেডের ১০৪টি ব্যাচের ২৬০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১৯৭৫ জন বিভিন্ন ট্রেডে আয়বর্ধণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।