পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে

লেখক:
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে হামলার মামলায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এবং ব্যবসায়ী রেজাউল হাসনাত ডেভিডের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

 

 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

 

আবু সাইদ মিয়া বলেন, গত ১৮ জুলাই বিকেল ৪টা থেকে ১৯ জুলাই ভোর ৫টা পর্যন্ত কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে এতে বিএনপি-জামায়াত একাত্মতা প্রকাশ করে সরকার পতনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করে। এর মধ্যে সেতু ভবনও রয়েছে। তারা গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি লুট করে, পুড়িয়ে দেয়। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে। ডেভিডকে সন্ধিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। অন্য আসামিদের সহায়তায় এমন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রথমে ডেভিডের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। তিনি বলেন, ডেভিড গত ১৩ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের বাইরে ছিলেন। অথচ, তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, তিনি বাসায় বসে উস্কানি দিয়েছেন ও অর্থায়ন করেছেন। ভূত-পেত্মী-জ্বিনও তো পারবে না দেশের বাইরে থেকে এমন ঘটনা ঘটাতে। বাংলাদেশে আসার পর তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ জনগণের সেবক। কিন্তু, নিরীহ মানুষকে ধরে ধরে এনে গ্রেপ্তার করব, এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

 

রেজাউল হাসনাত ডেভিড বলেন, পুলিশ বলছে, বাসায় বসে এসব করেছি, কিন্তু আমি দেশেই ছিলাম না। পাসপোর্ট আদালতে দাখিল করব।

তখন বিচারক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান রিমান্ডের কারণ। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার সাথে রেজাউল হাসনাত ডেভিডের সম্পৃক্ততা আছে। তিনি অর্থ যোগানদাতা।

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস কুমার পাল বলেন, পাসপোর্ট বিষয় না। অর্থের যোগান যে কোনো জায়গা থেকেই দেওয়া যায়।

 

এরপর পার্থের পক্ষে রিমান্ড শুনানি হয়। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তার ক্ষেত্রেও একই কথা। পার্থ ঘটনার সাথে জড়িত। রিমান্ডে নিলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।

পার্থের পক্ষে আলী বাবর রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তিনি বলেন, এই যে ৪-৫ দিন নাশকতা হয়েছে, কিছু পলিটিক্যাল পার্টির নাম চলে এসেছে। দেখার বিষয়, পার্থর নাম আসে কি না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় থেকে বিএনপি-জামায়াতের সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। পপুলার ম্যান, এজন্য তাকে ভিকটিমাইজ করা হয়েছে। পার্থ ঘটনার সাথে জড়িত না। রিমান্ড নামঞ্জুর করে সম্মানের সাথে তাকে জামিন দেওয়া হোক। তিনি বিএনপি-জামায়াতের সাথে কানেক্টেড না। তিনি সেপারেট পার্টি চালান।

 

এর পর আইনজীবী আদালতকে জানান, পার্থ কিছু বলতে চান। আদালত তার বক্তব্য শোনেন।

পরে আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হয়েছে, এটা বাস্তবতা। এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, নজিরবিহীন। ২৫০ থেকে ৩০০ জন ঘটনায় অংশগ্রহণ করে, সেটাও বলেছেন বাদী। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সন্দিগ্ধদের আইনের আওতায় হচ্ছে। কিছু তথ্য-উপাত্ত আছে, এজন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কী ভূমিকা রেখেছেন, তার জন্য রিমান্ড আবেদন। রিমান্ড পার্ট অব ইনভেস্টিগেশন। তাদের প্রত্যেকের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো।

 

আদালতে শুনানিকালে অনেকটা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ। বনানী থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর শাহ আলম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান হারুন-উর-রশিদ।