পারফরম্যান্স বাড়াতে তরুণদের যে টিপস দিলেন মুশফিক

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্বস্তির সিরিজ জয় হয়েছে। সবাই খুশি; কিন্তু একটা দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের জন্য সামনে অশনি সঙ্কেত। যে কারণে সিরিজ জিতেও মন ভালো নেই অধিনায়ক তামিম, সেরা পারফরমার মুশফিক কিংবা বিসিবি কর্মকর্তাদের।

কারণ, বাংলাদেশ তো জিতছে শুধুমাত্র সিনিয়রদের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। প্রথম ম্যাচে তামিম, মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দৃঢ়তায়। দ্বিতীয় ম্যাচেও সেই মুশফিক আর রিয়াদের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের রান ২৪৬ পর্যন্ত যেতে পেরেছে।

মুশফিক সেঞ্চুরি করলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪১ রান করে তার সঙ্গে একটি দারুণ জুটি গড়ে তুলতে পেরেছিলেন। যে জুটির ওপর ভর করে বাংলাদেশ জয়ের জন্য সংগ্রহ স্কোরবোর্ডে তুলতে পেরেছিল।

কিন্তু জয় সত্ত্বেও তাদের মন খারাপ, এখনও কোনো তরুণ ক্রিকেটার ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রাখতে পারছে না। দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারছে না। ওপেনিংয়ে লিটন দাসকে একের পর এক সুযোগ দেয়া হচ্ছে; কিন্তু নিজের নামের প্রতি সুবিচারই করতে পারছেন না তিনি। এই ম্যাচে করেছেন কেবল ২৫ রান।

মোহাম্মদ মিঠুন ছিলেন আগের ম্যাচে ব্যর্থ। শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। এ কারণে তাকে বাদ দিয়ে এই ম্যাচে নেয়া হলো মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। কিন্তু তিনিও দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়। দল যখন বিপদের মুখে তখন তার কাছ থেকে দায়িত্বশীল ইনিংস আশা করেছিল সবাই। কিন্তু মোসাদ্দেক খেললেন ১২ বল। রান করলেন ১০টি।

লক্ষ্মণ সান্দাকানের লেগ স্ট্যাম্পের ওপরে থাকা বলকে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন জায়গায় দাঁড়িয়ে মোসাদ্দেক। ব্যাটে-বলে হলেও সেটা ছিল যতসামান্য। বল ব্যাটের কিনারা চুমা দিয়ে গিয়ে জমা পড়লো উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে।

সাত নম্বরে আফিফ হোসেনকে রাখা হয়েছে প্রয়োজনে মেরে খেলবে, প্রয়োজনে ধরে খেলবে- এই জন্য। প্রথম ম্যাচে মেরে খেলার প্রয়োজনটা ভালোই বুঝেছিলেন; কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ধরে খেলার প্রয়োজনটা বোঝেননি। যার ফলে ৯ বলে ১০ রান করে বিদায় নিলেন তিনিও। আট নম্বরে মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হলেন শূন্য রানে। আর সাইফউদ্দিন তো মাথায় আঘাত পেয়ে রানআউটই হয়ে গেলেন।

মোট কথা, বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল কিন্তু ৯ নম্বর পর্যন্ত। শুধুমাত্র জেনুইন বোলার ছিলেন মোস্তাফিজ আর শরিফুল। বাকি ৯ জনের মধ্যে চারজন না হয় সিনিয়র, ৫ জন তো পড়েন তারুণ্যের কোটায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সিনিয়রদের ঘাড়েই বর্তালো ম্যাচটা। মুশফিক হাল ধরলেন, তাকে সঙ্গ দিলেন রিয়াদ।

তরুণদের এমন ব্যর্থ পারফরমেন্স নিয়ে চিন্তিত বিসিবিও। বিসিবির ক্রিকেট অপরাশেন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান মঙ্গলবার ম্যাচ চলাকালেই তরুণদের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। আর ম্যাচ শেষে কথা বলতে গিয়ে তরুণ ব্যাটসম্যানদের উদ্দেশ্যে ছোট্ট কথায় একটি কার্যকরি টিপস দিয়ে দিলেন মুশফিুর রহীমও।

তিনি মনে করেন, মঙ্গলবারের ম্যাচে লিটন, আফিফ, মোসাদ্দেকদের জন্য ভালো সুযোগ ছিল। তবে, মুশফিকের মতে- তারা চেষ্টা করেছে। যদিও আরেকটু সতর্ক হতো, তাহলে সেই চেষ্টা কাজে লাগতো। তিনি মনে করেন, দলে বেশ কিছু নিয়মিত পারফরমার থাকলে যে কোনো অবস্থাতেই ম্যাচ বের হয়ে আসবে।

মুশফিক বলেন, ‘আমার মনে হয় যে, এটা (পারফরাম থাকা) তো যে কোনো দলের জন্যই প্লাস পয়েন্ট। যদি একটা দলে সাত আটজন ধারাবাহিক পারফরমার থাকে, তাহলে তারা পারফরম করলে যে কোনো ম্যাচ বেরিয়ে আসবে। আমি মনে করি আজকে (মঙ্গলবার) একটা সুযোগ ছিল। লিডিং যারা প্লেয়ার, স্পেশালি তামিম সাকিব- যারা সবসময় রান করে বাংলাদেশের হয়ে। তারা পারেনি।’

 

তরুণদের ছোট্ট টিপস দিয়ে মুশফিক বলেন, ‘অন্য যারা প্লেয়ার ছিল- লিটন, আফিফ, মোসাদ্দেক আজকে নতুন এসেছে। ওদের জন্য সুযোগ ছিল। আমি মনে করি ওরা চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা আরেকটু সিলেক্টিভ হলে আরেকটু ভালো রেজাল্ট করবে। এসব উইকেটে আরেকটু সিলেক্টিভ হতে হবে। কখন লো রিস্ক শট খেলবে, কখন হাই রিস্ক, এটা নিজেকেও জানতে হবে। আমি আশা করি তারা আরও ম্যাচিউর হবে সময়ের সঙ্গে। খুবই খুশি হবো যদি ওরা খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারে। নাহলে দেখা যাবে সব প্রেসার যখন বড় ম্যাচ বা নরমাল ম্যাচে আমাদের ওপর চলে আসে, তখন আসলে কঠিন হয়ে যায়। আমি মনে করি ওরা দ্রুতই কন্ট্রিবিউট করা শুরু করবে। আর সেটা হলে আমরা স্পেশালি ওয়ানডেতে আরও ভালো দল হবো।’

অর্থ্যাৎ, তরুণদের জন্য মুশফিকের ছোট্ট টিপস হলো, একটু কৌশলী হওয়া। কোন বলে কোন শট খেলতে হবে সেটা জানা। বল সিলেক্ট করার যোগ্যতা তৈরি করা। কখন কোন ধরনের রিস্ক নিতে হবে সেটা জানা। এ কাজগুলো করতে পারলেই মুশফিকের আশা, তরুণরা আরও মাচিউর হয়ে উঠবে, প্রেসার নিতে পারবে। তরুণরা কী পারবে মুশফিকের কাছ থেকে এই বার্তাটা নিতে?

মুশফিকের কাছে নিজের সেঞ্চুরির চেয়ে দলের জয়টাই অনেক বড়। সেঞ্চুরি করার পর যদি জিততে না পারতেন, তাহলে সেই সেঞ্চুরির কোনো মূল্য নেই বলেই জানান তিনি। মুশফিক বলেন, ‘দেখেন, একশ তো একটা মাইলস্টোন; কিন্তু এটা একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। অল ইন অল আপনার দল জিতল কি না সেটা সবচেয়ে বেশি ম্যাটার করে। একশ করলে হয়তো আমরা ম্যাচটা নাও জিততে পারতাম। আমার মেইন টার্গেট ছিল যাতে পঞ্চাশ ওভার ব্যাট করতে পারি। যত রানই হোক, সেটা নিয়ে যেন ফাইট করতে পারি। আমি মনে করি ২৪৬ যথেষ্ট ভালো ছিল। এখন হয়তো আমরা বলতে পারি অনেক রান, কিন্তু আমি মনে করি এই উইকেটে অনেক ফাইটিং স্কোর ছিল। আমরা মানিসকভাবে তৈরি ছিলাম, আজকের আবহাওয়ায় হয়তো কার্টেল ওভার হতে পারে। মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম এমন হলে তো আমাদের হাতে নেই। নিশ্চিত ছিলাম আমি যাতে তৈরি থাকতে পারি যখনই খেলা আবার শুরু হবে।’

তবুও, দল জিতেছে, সিরিজ জিতেছে বলে এই সেঞ্চুরিটা মুশফিকের কাছে স্পেশাল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এটা জাস্ট আরেকটা সেঞ্চুরি। প্রত্যেকটা সেঞ্চুরিই আমার কাছে স্পেশাল যদি আমার দল জিতে। সেদিক থেকে অবশ্যই স্পেশাল। এটা আরেকটু স্পেশাল কারণ আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কখনো সিরিজ জিতিনি। এটার কারণে জিততে পেরেছি। অবশ্যই সামনের দিনে ভালো করতে আমাকে অনুপ্রেরণা দিবে।’