পানি ও বিদ্যুতে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (পয়ঃশোধনাগার) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

 

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরে ২৬০ কোটির লিটার পানির চাহিদা থাকলেও ঢাকা ওয়াসা এখন ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে।

তিনি বলেন, চাহিদার চেয়ে বেশি পানি উৎপাদন ক্ষমতা আছে ঢাকা ওয়াসার। পানির বিল এখন ১০০ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম ওয়াসা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ঢাকায় মাত্র ৬০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পেত। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখের মতো। পানি উৎপাদন হতো ১২০ কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার পানির বিল মাত্র ৬৪ শতাংশ আদায় হতো। রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ৩০০ কোটি টাকা।

 

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সমাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশকে বদলে দেবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচি আমরা হাতে নিই। ফলে, দ্রুত পানি উৎপাদন ও সরবরাহে শতভাগ সক্ষমতা লাভ করে।

তিনি বলেন, ঢাকায় এখন ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ পানি পাচ্ছে। ২৬০ কোটি লিটারের বিপরীতে ২৭০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের সক্ষমতা ঢাকা ওয়াসা করেছে। ঈর্ষণীয় সাফল্যের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ঢাকা ওয়াসাকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেবাদানকারী সংস্থা হিসেবে রোল মডেল বিবেচনা করে। এটা আওয়ামী লীগ সরকার সাফল্য, জনগণের সাফল্য। জনগণের বৃহত্তর সুবিধার জন্য এই কাজগুলো করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহের স্থায়ী সমাধানের জন্য ২০১৪ সালে একটি ওয়াটার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে। এই পরিকল্পনার আওতায় পদ্মা নদীর তীরে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধন করে ঢাকা শহরে সরবরাহের জন্য পদ্মা পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প এবং মেঘনা নদীর পানি পরিশোধন করে ধলপুর এলাকায় সরবরাহের জন্য ৪৫ কোটি লিটার পানি শোধনক্ষমতার সায়েদাবাদ ওয়াটার প্ল্যান্ট ফেজ-১, ফেজ-২, ফেজ-৩ আমরা করি।

 

‘সবগুলো আওয়ামী লীগ আমলে করা। ইতোমধ্যে পদ্মা পানি শোধনাগার চালু করা হয়েছে। বাকি দুটির কাজও চলছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ৭০ শতাংশ পানি নদী থেকে সরবরাহ করা যাবে, যা পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। আমরা ভূগর্ভস্থ পানি থেকে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত না থাকলে কোনো দেশের উন্নতি হয় না’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের সময় আমি আর আমার ছোট বোন জার্মানিতে ছিলাম। মিলিটারি ডিক্টেটর আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণ এবং দলের নেতাকর্মীদের ওপর ভরসা করে আমি একপ্রকার জোর করে দেশে চলে আসি। তারপর শুরু হয় সংগ্রাম।

 

‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত না থাকলে কোনো দেশের উন্নতি হয় না। পৃথিবীর কোনো দেশে মিলিটারি ডিক্টেটর উন্নতি করতে পারে না, এটা হলো বাস্তবতা। ২১ বছর সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকারে আসি। মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য প্রথম সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করি। সেভাবে শুরু হয় আমাদের পথচলা।’

‘জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নে পানি শোধনাগার এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা হবে’
স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী ও সচিবকে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ঢাকা শহরের জন্য করলাম, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা বিভাগীয় শহর, প্রতিটি জেলা, উপজেলা, একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত পানি শোধনাগার এবং পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য একটা মাস্টারপ্ল্যান আপনাদের করতে হবে। যদি এখনই জায়গা নির্বাচন এবং কাজ শুরু করতে পারি, তাহলে পর্যায়ক্রমে আমরা তা করতে পারব। গ্রামের প্রতিটি মানুষ শহরের সুবিধা পাবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে পয়ঃনিষ্কাশনের ২০ শতাংশ ঢাকা ওয়াসা করতে পারে। সেটি বিবেচনায় নিয়ে সুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকা শহরের চারদিকে পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলব। স্মার্ট বাংলাদেশ, সেটা সর্বক্ষেত্রেই স্মার্ট হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। পয়ঃনিষ্কাশন বা সুপেয় পানির ব্যবস্থা স্মার্টলি হবে, এটাই আমরা চাই।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়ান, ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটির (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম উপস্থিত ছিলেন।