কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেল ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৩২৫ টাকা। এটি এই মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা। তিন মাস ১৩ দিন পর শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে খোলা হয় এসব দানবাক্স। সারাদিন গণনা শেষে রাতে জানানো হয় টাকার পরিমাণ।
আজ রাত সাড়ে ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এতথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নগদ টাকা ছাড়াও দানবাক্সে বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কার ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে গত ৬ মে খোলা হয়েছিল মসজিদের দান বাক্স। তখন সেখানে পাওয়া যায় ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা।
আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে এবং কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে খোলা হয় মসজিদের সব সিন্দুক। এরপর বস্তাবন্দি টাকা নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের দোতলায়। টাকাগুলো ভরাট করতে ২৩টি বস্তার প্রয়োজন হয়।
মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন লোকজন পাগলা মসজিদে দান করে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন এই মসজিদে। দান করেন মোটা অঙের টাকা।
দানবাক্স খোলার সময় মসজিদে নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড় দল টাকা-পয়সা গণনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন। টাকা গণনার দায়িত্বে ছিলেন রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় মাদরাসার ১৩৮ জনসহ মোট ১৯৮ জন।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে।
পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কাজী মহুয়া মমতাজ জানান, গত ৭ জানুয়ারি খোলা হয়েছিল সিন্দুক, তখন পাওয়া যায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এর আগে গত বছরের ১ অক্টোবর খোলা হয় সিন্দুক। সেদিন পাওয়া যায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। ২ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার বাদে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। তারও আগে গত বছরের মার্চে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দানের টাকায় মসজিদের বড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৩০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরো নানা আয়োজন। কমপ্লেক্সের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ।
কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর পাগলা মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের সঙ্গে পাগলা মসজিদের পরিধির সঙ্গে বেড়েছে খ্যাতিও।