জঙ্গি দমনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে পাকিস্তানে ৩০ কোটি ডলার সহায়তা বন্ধ করতে যাচ্ছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর পাকিস্তান সফরের আগে আগে এ ঘোষণা এল। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের জন্য প্রায় সব ধরনের নিরাপত্তা সহায়তা কাটছাঁট করা হবে বলে ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল কন ফল্কনের বলেছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী এই অর্থ অন্য ‘জরুরি অগ্রাধিকারমূলক’ কাজে ব্যবহার করতে চায়।
এই সিদ্ধান্ত মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত হতে হবে। বিভিন্ন দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিভিন্ন সহায়তার বিষয়ে জানুয়ারি মাসে ঘোষিত বড়সড় কাটছাঁটের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের মৈত্রী রাষ্ট্র বলা হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিজের ভূমিতে পাকিস্তান হাক্কানি নেটওয়ার্ক, আফগান তালেবানসহ জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ তুলে কড়া সমালোচনা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
গতকাল শনিবার কল ফল্কনের এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কোনো বাছবিচার না করে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে পাকিস্তানকে অব্যাহতভাবে বলে যাচ্ছি আমরা।’ তিনি জানান, এ ব্যাপারে ‘পাকিস্তানের সুনির্দিষ্ট কার্যকারিতার অভাবে’ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা বাতিল করে অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশের অভিযোগ রয়েছে, জঙ্গি নেটওয়ার্কের জন্য পাকিস্তান তার ভূমিকে স্বর্গ বানিয়ে রেখেছে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে আফগানিস্তানে হামলা চালাতে ওই জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সুযোগ দিয়ে রেখেছে পাকিস্তান। বিশেষ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই দেশটিকে জঙ্গিদের নিরাপদ স্বর্গ বানিয়ে রেখেছে। তবে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তান।
এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র জানায়, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জাতিসংঘ ত্রাণ ও কার্যক্রম সংস্থাকে (ইউএনআরডব্লিউএ) ‘অসংশোধনীয় ত্রুটিপূর্ণ’ উল্লেখ করে সংস্থাটির জন্য সব ধরনের অর্থ সহায়তা বন্ধ করতে যাচ্ছে তারা।
জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্ক প্রতিবেশী রাষ্ট্র আফগানিস্তানকে লক্ষ্য করে তার জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করে। বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে চালানো এসব হামলার ব্যাপারে পাকিস্তান কখনো প্রতিহত করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে আফগান সরকারবিরোধী চরমপন্থী ইসলামি সংগঠন আফগান তালেবানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আফগান তালেবানের সহযোগী পাকিস্তানি তালেবান সংগঠনগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও অনেক হামলা চালিয়ে থাকে। হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও আফগান তালেবান দুই সংগঠনের একাধিক হামলায় আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য ও মার্কিন কর্মকর্তা নিহত হয়েছে।
দেশের পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে পাকিস্তান বহু বছর ধরে আফগান তালেবানকে ব্যবহার করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত হামলার পর আইএসআই আফগান জঙ্গিদের অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করা শুরু করে। আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় ২০০১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক সামরিক বাহিনীর জন্য নিজেদের ভূমি ব্যবহার করতে দেয় পাকিস্তান। পশ্চিমাঞ্চলে আল-কায়েদার মতো কিছু জঙ্গি সংগঠনের লড়াইয়েও পাকিস্তান সহায়তা করে থাকে। বিশ্লেষকদের মতে, আফগান বিদ্রোহীদের আশ্রয় ও সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রেখেছে পাকিস্তান। এই অঞ্চলে প্রধান প্রতিপক্ষ ভারতের আফগানিস্তানের ওপর প্রভাব সীমিত রাখাই পাকিস্তানের লক্ষ্য।