পাঁচ বছরে হাসানাত-জাহিদ-সাদিকের সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ

:
: ৭ মাস আগে

২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ হলফনামায় নিজেকে লাখপতি হিসেবে উল্লেখ করলেও ৫ বছর পর তার সম্পদের হিসাবে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সাবেক এ সিটি মেয়র হলফনামায় তার সম্পদ বিবরণীতে দেখিয়েছেন কোটি কোটি টাকার নগদ অর্থ।

২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনের হলফনামায় সাদিক আব্দুল্লাহ তার কাছে থাকা নগদ টাকা দেখিয়েছিলেন ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এ ছাড়া সে সময় বাড়িভাড়া থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪ শ’ টাকা, চাকরি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও সঞ্চয়পত্র ২ লাখ টাকা। সে সময় বস্তুগত সম্পত্তি হিসেবে তিনি দেখিয়েছিলেন একটি রিকন্ডিশন মাইক্রোবাস, খাট, আলমারি, সোফা ও ডাইনিং টেবিল, পূর্বাচলে রাজউকের আবাসিক প্লট এবং গুলশানের নিকেতনে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট। তবে বরিশাল সিটি মেয়র থাকাকালে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ।

সংসদ নির্বাচনের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত সিটি নির্বাচনে তার পেশা ছিল কান্তা করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক। তবে এবারে তিনি তার পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মৎস্য চাষ ও রাখি মালের ব্যবসা। তার কাছে নগদ টাকা রয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নিজ পেশা থেকে আয় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মেয়র পদে দায়িত্বকালে সম্মানী ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা, শেয়ার ডিবেঞ্জার ২ লাখ টাকা, ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকার অকৃষি জমি ও গুলশানের নিকেতনে একটি আবাসিক ফ্ল্যাট যার মূল্য ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।

এদিকে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে সাদিকের স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ না থাকলেও ৫ বছরের ব্যবধানে স্ত্রীর নামে সম্পদ হয়েছে ১০ ভরি স্বর্ণ এবং ২০ লাখ টাকা মূল্যের ৬৫ শতাংশ অকৃষি জমি।

তবে গত সিটি নির্বাচনে তার হলফনামায় কোনো মামলার কথা উল্লেখ না থাকলেও এবারের সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দুইটি ফৌজদারি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য দুই মামলাতেই বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি।

জাহিদ ফারুক

অন্যদিকে বরিশাল-৫ আসন থেকে পুনরায় নৌকার টিকিট পাওয়া পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখেরও সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হলফনামায় পেশা ব্যবসা উল্লেখ করা জাহিদ ফারুকের বাড়িভাড়া থেকে বাৎসরিক আয় ছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার ৮০২ টাকা। এ ছাড়া তার নগদ ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৫ টাকা, গাড়ির মূল্য ২৬ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫০ টাকা, স্বর্ণ ২০ ভরি, ইলেক্ট্রনিক ও আসবাবপত্র ৪ লাখ টাকা, অকৃষি জমি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছিল। স্ত্রীর নামে ছিল আরও ৩০ ভরি স্বর্ণ। এ ছাড়া ওই সময় তার গাড়ি ক্রয় বাবদ প্রায় ৭ লাখ টাকার ঋণও ছিল।

তবে মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে তার সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকরিজীবী জাহিদ ফারুখের পেনশন ও সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়া ভাতা থেকে বাৎসরিক আয় ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৬ টাকা। ব্যাংক মুনাফা ও ফ্ল্যাট বিক্রি করে আয় ১ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৯০২ টাকা, নগদ রয়েছে ৫৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৩ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকৃত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫০ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেট কার, স্বর্ণ ২০ তোলা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও আসবাবপত্র ৭০ হাজার টাকার, বরিশালের আলেকান্দায় দুইটি বাড়ি ও কক্সবাজার ও ঢাকার বারিধারায় দুইটি দালান রয়েছে যার মূল্য ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা। জাহিদ ফারুখের স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ রয়েছে ৯২ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ ৫৬ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৭০ লাখ টাকা, ১০ তোলা স্বর্ণ এবং একটি পিস্তল রয়েছে যার মূল্য ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ

বরিশাল-১ আসনে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহরও সম্পদ বেড়েছে ব্যাপক। যেখানে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার কাছে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৭৪ টাকা, সেখানে এবারের সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার নগদ অর্থের পরিমাণই ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০৯ টাকা।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর হলফনামায় দেখা যায়, কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া বাবদ আয় ৭ লাখ ৬৩ হাজার ১৯৬ টাকা, ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ২ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫ টাকা, নগদ অর্থ ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৭৪ টাকা, ব্যাংকে জমা ২ কোটি ৭৯ লাখ ২২ হাজার ৫৮৯ টাকা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, একটি প্রাইভেট কার ও একটি জিপ ৭৯ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৯ টাকা, ১০০ ভরি স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক ও আসবাবপত্র ২ লাখ টাকা, কৃষি জমি ২০ একর, অকৃষি জমি ৪০ একর এবং ১ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৫ টাকা মূল্যের একটি দালান রয়েছে নিজ নামে।

এ ছাড়া স্ত্রীর নামে নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৪ টাকা, ব্যাংকে জমা ১ কোটি ২ লাখ টাকা, শেয়ার ৮ লাখ টাকা, ১৮ লাখ টাকার একটি কার, স্বর্ণ ৬০ তোলা, ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও অকৃষি জমি ৫২ ডেসি মাইল।

তবে ২০২৩ সালের হলফনামায় হাসানাত উল্লেখ করেছেন, কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৩ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয় পত্র ও ব্যাংক আমানত ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৮৯৮ টাকা, চাকরি থেকে আয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০৯ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২৫ কোটি ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯ টাকা, শেয়ার রয়েছে ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকার দুইটি জিপ, ৫০ ভরি স্বর্ণ, আসবাবপত্র ২ লাখ টাকা, কৃষি জমি ১৭ একর, অকৃষি জমি ৪১ একর, ঢাকার কলাবাগানে একটি দালান যার মূল্য ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ টাকা। তার জামানতবিহীন ঋণ রয়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।