পরীক্ষার দিন জানতে পারলেন তারা শিক্ষার্থী নন

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের কয়েকজন অফিস সহকারীর প্রতারণার কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা কলেজে ভর্তির যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে নিয়মিত ক্লাস এবং পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগে থেকেই তারা প্রবেশপত্রের জন্য অফিস সহকারী হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। হারুন তাদের আজ দেব, কাল দেব করছিলেন। সর্বশেষ আজ পরীক্ষার্থীর দিন সকালে তাদের আসতে বললে ওই শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে জানতে পারেন তারা কলেজের শিক্ষার্থী না। তাদের ভর্তি ভুয়া।

এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতারিত শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আগামীতে ওই শিক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে।

 

জানা গেছে, অভিযুক্ত অফিস সহকারী হারুনুর রশিদ মাস্টার রোলে কলেজে কর্মরত এবং কলেজের পরীক্ষা কার্যক্রম কমিটির সদস্য। তার নামে বিগত সময়ে একাধিকবার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তিনি ছাড়াও এই প্রতারণার কর্মকাণ্ডে আমিনুল ইসলাম, আব্দুল হান্নান নামে আরও দুই সহকারী জড়িত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রতারণার শিকার বগুড়া সদরের সাবগ্রাম এলাকার রাশেদুল ইসলাম জানান, তিনি এসএসসি পরীক্ষায় পাশের পর সরকারি শাহ সুলতান কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুসারে তার সিরিয়াল আসে করোনেশন স্কুল এন্ড কলেজে। কিন্তু তিনি ভর্তির বিষয়ে জানতে শাহ সুলতান কলেজের অফিসে যোগাযোগ করেন। ওই সময় তার কথা হয় অফিস সহকারী হারুনুর রশিদের সঙ্গে।

 

সে সময় হারুন তাকে বলেন, অফলাইন পদ্ধতিতেও ভর্তি হওয়া যাবে। তার কথামতো ছয় হাজার টাকা দেন রাশেদুল ইসলাম। এই ফি পরিশোধের রশিদও তাকে দেয়া হয়। ভর্তির পর তার শ্রেণি রোল দেওয়া হয় ১৫৭৫। এরপর রাশেদুল নিয়মিত ক্লাস করেন। অংশ নিয়েছেন প্রাক-নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষায়।

রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ভর্তির সময় টাকা নিয়েছে। এরপর কলেজের শোল্ডার ব্যাজ, পরীক্ষার জন্য টাকা নিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ৬ হাজার টাকা দিয়ে ফরম ফিলাপও করেছি। অথচ প্রবেশপত্র নিতে এসে দেখি আমরা শিক্ষার্থী না।

প্রতারণার শিকার শারমিন আক্তার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা তো কলেজের নিয়ম অনুসারে সব করেছি। ভর্তির পর আমরা একাধিকবার হারুনের কাছে কাগজপত্র চেয়েছি। কিন্তু তিনি বলেছেন, তোমরা তো ভর্তি হয়েছো। ক্লাস করো, কাগজ দিয়ে কি করবা।

 

শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের পেয়েছি, যারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসে ঘুরে গেছে। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তাদের সঙ্গে প্রতারণার কথা। এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ২০ জন হবে।

এ বিষয়ে জানতে হারুনুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারও কাছে টাকা নেইনি। আমিনুলেরা নিতে পারে। এ বিষয়ে আপনারা বড় বাবুর সঙ্গে কথা বলেন।

 

অফিস সহকারী আব্দুল হান্নান বলেন, আমি শুধু একজনের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়েছি। সেটা হারুনকে দিয়েছি কাজ করার জন্য। এটা আমার ভুল হয়েছে।

কলেজের প্রধান সহকারী (বড় বাবু) তাজমিলুর রহমান বলেন, আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। এসব টাকা নেয়ার কাজ হারুনেরা করেছে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা টাকা দিছে তাদের কাছে কোনো রশিদ নেই। আমার ক্যাশ মিলিয়ে দেখেন কোনো অনিয়ম পাবেন না।

শাহ সুলতান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী বলেন, ওই শিক্ষার্থীরা দুই বছরে কখনো কোনো শিক্ষকের কাছে আসেনি। তাহলে হয়তো এই অবস্থায় পড়া লাগতো না। হারুনুর রশিদ এর আগেও অনৈতিক কাজে বরখাস্ত হয়েছিল। সে সময় তিনি এমন অপরাধ আর করবেন না; এ মর্মে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু একই ধরনের অভিযোগ আবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে সবোর্চ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রেজাউন নবী বলেন, ঘটনার মূলে অফিস সহকারী হারুন রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মোট কতজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা তা বলতে পারি না। আমরা মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করা হবে। এবার হয়তো আর কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু আগামীতে যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় ৫-৭ জন একই রকম প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। তবে ওই সময় কলেজের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তারাও হারুনের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিল।