পরিবেশবান্ধব মসজিদ নির্মাণে সেরা পুরস্কার

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago
পরিবেশবান্ধব মসজিদ নির্মাণে সেরা পুরস্কার

ওয়াটারস্কেপ ও ল্যান্ডস্কেপের সমন্বয়ে সম্পূর্ণ নতুন চিন্তায় প্রাকৃতিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ব্যতিক্রমী মসজিদ ও শাটল লুম শেড বানিয়ে আলোচনার ঝড় তুলেছেন উদীয়মান একদল প্রকৌশলী। এই ব্যতিক্রমী মসজিদ ও শাটল লুম শেডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রাকৃতিকভাবে ভিতরে বায়ুপ্রবাহের ব্যবস্থা ও আলোর খেলা।

ব্যতিক্রমী এই মসজিদ ও শাটল লুম শেড দেশের শিল্প-কারখানায় এনেছে নতুন এক বৈচিত্র্য। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার অ্যাম্বার ডেনিম কারখানায় পরিবেশবান্ধব মসজিদ ও শাটল লুম শেড নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন ওই প্রকৌশলীরা।

মূলত ওয়াটারস্কেপ ও ল্যান্ডস্কেপের সমন্বিত একটি রূপ দিয়ে বানানো হয়েছে মসজিদটি। শিল্প এলাকায় নির্মাণ করা এই মসজিদে প্রাকৃতিকভাবে বায়ুপ্রবাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে পার্ফোরেটেড কংক্রিট ব্লক। বাইরের আলো-বাতাসের সঙ্গে স্থাপনার ভিতরও আলো-বাতাসের খেলা চলবে এটিই ছিল এই নকশার মূল বিষয়।

শাটল লুম শেড চত্বর ঘিরে আছে জলাধার, যার ওপর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়ে চত্বরে প্রবেশ করছে। এতে কারখানার ভিতরের তাপমাত্রা  কিছুটা কম থাকছে। এই বাতাস প্রবাহের জন্য প্রচলিত ইটের দেয়ালের পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে বাঁশের তৈরি এক ধরনের বিশেষ দেয়াল, যা একই সঙ্গে সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলোর নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

কার্বন নিঃসরণ ও বিদ্যুৎ খরচও কম। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অ্যাম্বার ডেনিম কারখানার ভিতরে পূর্ব পাশে খোলা জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে শাটল লুম শেড। শেডের পূর্ব-পশ্চিম পাশে রয়েছে জলাধার, যা থেকে ঠাণ্ডা বায়ু শেডের ভিতরে প্রবেশ করছে। শাটল লুম শেডটি দেখতেও নান্দনিক। একটু উত্তরেই ব্যতিক্রমী ওই মসজিদ। মসজিদের দেয়াল এমনভাবে নির্মিত যে বাইরের বাতাস ভিতরে যাচ্ছে।

আবার অন্যদিক দিয়ে বেরিয়েও যাচ্ছে। এমনকি মসজিদের ওপর দিয়েও বাতাস ও আলো সরাসরি ভিতরে প্রবেশ করছে। মসজিদের চারপাশে রয়েছে জলাধার। এই জলাধারের স্বচ্ছ পানিতে বিদেশি নানা জাতের মাছ খেলা করতে দেখা যায়। এশিয়ার সেরা সব স্থাপত্যশৈলীকে প্রশংসিত করার আয়োজন করে থাকে আর্কেশিয়া কাউন্সিল। এশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নমূলক টেকসই সব স্থাপত্যকর্ম আর পরিকল্পনা নিয়ে এশিয়ার সব দেশের সেরা স্থপতিরা একত্র হন আর্কেশিয়া কাউন্সিলে। স্থাপত্যকর্মের ওপর সংস্থাটি আর্কেশিয়া অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পুরস্কার দিয়ে থাকে।

এবার ২১ থেকে ২৬ মে ভারতের জয়পুরে হয়ে গেল ১৯তম আর্কেশিয়া ফোরাম। আর সেই ফোরামে পাবলিক অ্যামেনিটি ও শিল্প স্থাপনা এই দুটি বিভাগে সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের একদল প্রকৌশলী। পরিবেশবান্ধব মসজিদ ও শাটল লুম শেড নির্মাণ করে এই পুরস্কার জয় করেছেন স্থপতি লুত্ফুল্লাহিল মজিদ, মো. জোবায়ের হাসান, নবী নেওয়াজ খানসহ বাংলাদেশি প্রকৌশলী দলের সদস্যরা। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার অ্যাম্বার ডেনিম কারখানার চত্বরে নির্মিত হয়েছে এই পরিবেশবান্ধব মসজিদ। মূলত ওয়াটারস্কেপ ও ল্যান্ডস্কেপ সমন্বিত একটি রূপ দিয়ে বানানো হয়েছে এই মসজিদ। বাইরের আলো-বাতাসের সঙ্গে স্থাপনার ভিতরেও আলোর খেলা চলবে এটিই ছিল এ নকশার মূল বিষয়।

পাশাপাশি শাটল লুম শেড প্রকল্পের জন্য এসেছে শিল্প স্থাপনা বিভাগে আর্কেশিয়ার বিশেষ পুরস্কার। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি ও উপাদান ব্যবহার করে নির্মিত এই স্থাপনাগুলো পরিবেশের সঙ্গে যেমন মানানসই, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য নিয়ে এসেছে সম্মাননা। তিন বন্ধু জুবায়ের হাসান, লুত্ফুল্লাহিল মজিদ ও নবী নেওয়াজ খান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতক শেষ করে গড়ে তোলেন আর্কিটেকচার ফার্ম আর্কিগ্রাউন্ড। একদিন তিন বন্ধু বুয়েট প্রাঙ্গণে এসে ব্যতিক্রমী কিছু করার চিন্তা করেন। তখন তিন বন্ধু বলেন, চারপাশে জলাধার, যার ওপর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়ে ভিতরে প্রবেশ করবে, বাতাস চলাচলের সুবিধার পাশাপাশি থাকবে বাঁশ দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ দেয়াল, যা সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলোর নিশ্চয়তা দেবে, বিদ্যুৎ খরচও কমবে— এমন একটি স্থাপনা গড়ে তোলা দরকার। যে কথা সেই কাজ।

গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার অ্যাম্বার ডেনিম কারখানা চত্বরে মসজিদ নির্মাণের সুযোগ এলো। হাতছাড়া করলেন না তারা এ সুযোগ। পরিবেশবান্ধব এ মসজিদের ছাদে ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিটের পরিবর্তে একই খরচে লাগানো হলো সিমেন্ট-কংক্রিটের ব্লক। সব মিলিয়ে শ্রমিকদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই পুরো পরিকল্পনা করা হলো। এখানেই শেষ নয়, রাখা হলো শ্রমিকদের অবসরে হস্তশিল্পের কাজ করার সুযোগ; তাদের ছেলেমেয়ের জন্য তৈরি হবে পাঠশালা। স্বল্প পরিসরে দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে চমৎকার এই নকশা। প্রকৌশলী জুবায়ের হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তাঁত দিয়ে কাপড় বোনা বাংলাদেশের বহু প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি। তাঁতি সম্প্রদায়ের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা একটি প্রকল্পের কথা ভাবছিলাম। স্বল্প খরচে দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার করে এই পরিবেশ তৈরি করার চ্যালেঞ্জটাও আমরা নিতে চেয়েছি। ’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পে আমার সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছেন দুই বন্ধু লুত্ফুল্লাহিল মজিদ ও নবী নেওয়াজ খান। ’