পরিবারের দাবি বরিশালে মুরুব্বিদের চাপে জুতা আনতে গিয়ে মারা গেছে মাইশা

:
: ১১ মাস আগে

বরিশাল নগরের রুপাতলীতে ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হওয়া মাইশা আব্দুল্লাহ (১৩) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।

পরিবার ও স্বজনদের দাবি, মুরুব্বিদের চাপে তৃতীয় তলার সানশেডে পরে থাকা জুতা আনতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে যায় মাইশা।

কেউ কেউ বলছেন, তাকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
আর এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি মডেল থানায় তিন নারীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন।

তিনি জানিয়েছেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মৃত মাইশা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নের সঠিখোলা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শারমিন আক্তার দম্পতির বড় মেয়ে। তবে তারা বরিশাল নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেসরকারি একটি হাউজিংয়ের আরিয়ান কটেজ নামক ভবনের নিচতলায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকত মাইশা। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল সে।

মৃতের খালা ঝুমুর আক্তারসহ স্বজনরা জানান, ভবন মালিকের স্বজন শাহানাজ পারভীন গত ০৩ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে মাইশাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ভবনের তৃতীয় তলার ছাদে যান। এর কিছুক্ষণ পর স্বজনরা মাইশাকে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করেন। তখন শাহানাজ পারভীনকে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমে তিনি মাইশা ছাদে বলেন। পরক্ষণেই মাইশা ছাদ থেকে পরে গেছে বলেও জানান তিনি।

এ কথা শুনে মাইশার মা শারমিন আক্তার ভবনের তৃতীয় তলার ছাদে গিয়ে শাহানাজ পারভীনের শাশুড়ি বৃদ্ধ সেতারা বেগমকে দেখতে পান। তখন তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, মাইশা নিচে পড়ে গেছে। এরপর শারমিনসহ স্বজনরা ভবনের নিচে এসে মাইশাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অসুস্থ থাকাকালীন মাইশার বরাতে খালা ঝুমুর আক্তার বলেন, পাশের ভবনের চতুর্থ তলার ভাড়াটিয়া আবুল কালামের সন্তানের একটি জুতা আরিয়ানা কটেজের তৃতীয় তলার সানশেডের ওপর পড়ে যায়। যা আবুল কালামের স্ত্রী তাহারাত বেগম এনে দেওয়ার জন্য মাইশাকে বলে। মাইশা তাতে অপারগতা জানায়।

এদিকে শাহানাজ পারভীন যখন মাইশাকে ডেকে ছাদে নিয়ে যায় তখন তার শাশুড়ি বৃদ্ধা সেতারা বেগম সেখানেই ছিলেন। তারা ওই জুতা এনে দেওয়ার নামে মাইশাকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।

থানায় অভিযোগের বিষয়ে নিহত মাইশার স্বজন মাসুদ সিকদার বলেন, যদি ছাদ থেকে মেয়েটি পড়েই যায়, তাহলে তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্বজনদের জানানো হতো। কিন্তু ঘটনার ভিন্ন রহস্য থাকায় মাইশার ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি গোপন রেখে শাহানাজ পারভীন ঘরের ভেতরে চলে যান। আবার মাইশাকে উদ্ধার ও হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতা না করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে স্বজনদের সন্দেহ সৃষ্টি হলে আর অসুস্থ অবস্থায় মাইশার বক্তব্যের সূত্র ধরে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন নারীকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক, সেইসঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।

মাইশার বাবা মামুন আব্দুল্লাহ বলেন, আমাদের অজান্তে বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও স্বজনরা আমার মেয়েকে ছাদের কার্নিশে জুতা তোলার জন্য বাসা থেকে ডেকে নেয়। কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও তারা আমার মেয়েকে জোর করতে থাকে। তাদের হেয়ালিপনায় আমার মেয়ে মারা গেল। এ মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী। আমি মনে করি পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে তারা হত্যা করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

এবিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) বিপ্লব কুমার মিস্ত্রি বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, নিহত মাইশার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তি ও ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।