নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, নিরাপদ সড়ক আইন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাস্তবায়ন করা হলেও, কোনো এক অদৃশ্য কারণে বারবার হোঁচট খাচ্ছে। যদিও যুগোপযোগী এই আইনটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর পরিবহন খাত থেকে সাধুবাদ জানানো হয়, কিন্তু আইনটি বাস্তবায়নের পথে তারাই (পরিবহন খাত) আবার কালক্ষেপণ করতে চাইছে ও বাধার সৃষ্টি করছে।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নিসচা আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন তিনি
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন করা এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি। প্রায় তিন দশক হতে চলল সড়ককে নিরাপদ করার সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে আসছে নিসচা। এই সামাজিক আন্দোলনের শুরু থেকেই আমরা চালক, মালিক, যাত্রী, প্রশাসন সবাইকে যার যার দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে চেয়েছি। আজও সেই কাজটি করে চলেছি। এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা একটি স্পষ্ট বোধ করতে পেরেছি যে, সড়ককে নিরাপদ করার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। মালিক, প্রশাসন ও যাত্রীদের অধিকাংশ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কতটা আন্তরিক, সেটাই যেখানে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, সেখানে কতটুকু সচেতনতা আশা করা যায়? যে কারণে প্রশ্ন উঠেছে, সড়ক দুর্ঘটনা কেন রোধ হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর আমরা এতগুলো সময় পার করলাম, অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় সচেতনতার ক্ষেত্রে তার ফলাফল শূন্যই বলা চলে। ২৫ বছরের পাকিস্তানের নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে পারলাম মাত্র ৯ মাসে। ৯ মাসে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারলে ৫০ বছর পার হতে যাচ্ছে, আমরা সড়ক দুর্ঘটনাকে কমিয়ে একটি জায়গায় দাঁড় করাতে পারছি না কেন? তাহলে কি আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আন্তরিক না? আর এই আন্তরিকতার অভাব কোথায়?
এত বছর কাজ করার পরও কেন সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না, এমন প্রশ্ন তুলে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এটা অর্থনীতির কোনো সমস্যা নয়। ৫০ বছরে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এত কিছু যদি আমরা করতে পারি, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না কেন? এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে কিছু বিষয়ের উদাসীনতা। এই উদাসীনতার কথা বলতে হচ্ছে কারণ আন্তরিকতার অভাব বলে। নানা অব্যবস্থাপনা দূর করার বিষয়ে বরাবরই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে সমস্যা যে তিমিরে থাকার সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। যারা সরকারি দলে আছেন শুধু তারাই নন, যারা বিরোধী দলে ছিলেন তারাও এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাদের সদিচ্ছার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
সভায় বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।