বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ইস্যুতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের প্রকাশিত নথিতে ১৩টি বড় ভুল রয়েছে বলে দাবি দলটির। এই দাবির আলোকে নথিকে ‘রহস্যজনক’ বলছে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব দাবি করেন।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নথিতে থাকা ‘অসংগতি’ তুলে ধরে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
নথির যেসব স্থানে ‘ভুল’ করা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে এ ধরনের ভুল করা অস্বাভাবিক বলেও দাবি মির্জা ফখরুলের।
তারেক রহমান পাসপোর্ট জমা দিয়ে নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন—পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে গতকাল সোমবার তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম লন্ডনে বলেছিলেন, ‘২০১৪ সালের ২ জুন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফেরত পাঠানো হয়। তাঁদের কারও কাছে কোনো ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই, যা দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে আসতে পারবেন।’
ঢাকায় ফিরে গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাঁর বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে তিনি তারেকের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের কপি এবং ব্রিটিশ হোম অফিসের একটি নথি দেখান। পাসপোর্ট হস্তান্তর মানে নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়া কি না, তা জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তা-ই মনে করি। বিদেশে আপনার পরিচয় হচ্ছে আপনার পাসপোর্ট। এটি ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে আপনি সেটি দাবি করছেন না। আমার হিসেবে তিনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের নাগরিক নন।’
বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, নথির শুরুতেই ডিপার্টমেন্টের নাম ভুল লেখা হয়েছে। চিঠিতে লেখা আছে, ‘বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি’। কিন্তু হবে ‘হাইকমিশন অব বাংলাদেশ’। এতে বড় করে টেলিফোন নম্বর ও ফ্যাক্স নম্বর দেওয়া আছে, যেটা ‘আনকমন’ (অস্বাভাবিক)। ব্রিটিশ চিঠির মধ্যে এগুলো থাকে না। ‘ডিয়ার স্যার’ লেখার পরিবর্তে ‘ডিয়ার স্যারস’ লেখা আছে। চিঠির ওপরে চারটি পাসপোর্টের কথা বলা হলেও নিচের দিকে আবার একটি পাসপোর্টের কথা বলা হয়েছে। চিঠির শেষাংশে ‘ফেইথফুলি’র এফ বড় হাতের অক্ষর দিয়ে লেখা হয়েছে। ব্রিটিশরা এটা কখনোই লিখবে না। যিনি সই করেছেন, তাঁর কোনো নাম নেই। এসব বিবেচনায় চিঠি নিয়ে যথেষ্ট রহস্য রয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তারেক রহমান বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। আর সংগত কারণেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তাঁর পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী, তাঁর পাসপোর্ট জমা রেখে তাঁকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তাঁর কোনো কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন, তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্রেফ জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তারেক রহমানের পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তার দ্বারা কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, লন্ডন সফরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কী বিচিত্র এই সরকার! কী দুর্বল তাদের অপকৌশল!
মির্জা ফখরুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে যা হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তাঁর এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।’
বিএনপির মহাসচিবের ভাষ্য, দেশের জনগণ এখন দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ও অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত। গুম-খুন-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ। এই সময় অপরাজনীতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হচ্ছে। এতে জনগণের ক্ষোভের মাত্রা আরও বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।