পবিত্র আশুরা রবিবার, তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

পবিত্র আশুরা ১০ মহরম (রবিবার, ১ অক্টোবর)।দিনটি মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমান, বিশেষ করে শিয়া মুসলমানরা ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে পালন করেন দিনটি। এই দিনে মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। সেই থেকে মুসলিম বিশ্বে কারবালার শোকাবহ ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যাওয়ায় শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে মহরম মাসের গণনা শুরু হয়।

এদিবে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হোসনি দালান। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের মৃত্যুর প্রতীকী শোক পালন করতে প্রতি বছরই তাজিয়া মিছিল বের করে ইমামবাড়াগুলো।

রবিবার সবকিছু ঠিক থাকলে জোহরের নামাজের পর (দুপুরে) বের হবে তাজিয়া মিছিলটি। পুরাতন ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ধানমণ্ডি লেকে যাবে। লেকেই ডুবানো হবে তাজিয়াটি।

রাজধানীতে আশুরা উপলক্ষে বড় আয়োজন পুরান ঢাকায় হোসনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে। এছাড়া মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার,লালবাগ, পল্টন, মগবাজার থেকেও আশুরার মিছিল বের হয়। মোগল আমল থেকেই এই অঞ্চলে তাজিয়া মিছিলের প্রচলন হয়।

এদিকে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি হোসনি দালান পরিদর্শনের পর ডিএমপি কমিশনার বলেন, পবিত্র আশুরা উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এসব তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি,বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে মিছিলে অংশ নেন হাসান-হোসেন ভক্তরা।

তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে অনেক সময়ই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠে। একইসঙ্গে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর কারণে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যও ম্লান হয়। তাই নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।

মুসলমানদের কাছে দিনটি ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয়।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির বাণী
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণকারী সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকের দিন পবিত্র আশুরা। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ), তাঁর পরিবারের সম্মানিত সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ এ দিনে বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালায় শহিদ হন।

রাষ্ট্রপতি বাণীতে আরও বলেন, ইসলামের সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখার জন্য তাঁদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসে সমুজ্জল হয়ে আছে। কারবালার শোকাবহ ঘটনার স্মৃতিতে ভাস্বর পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী আমাদেরকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রেরণা যোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার ।

পবিত্র আশুরার শিক্ষা সকলের জীবনে প্রতিফলিত হোক এ প্রত্যাশা করে রাষ্ট্রপতির বলেন,ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। এখানে হানাহানি, হিংসা, দ্বেষ বা বিভেদের কোন স্থান নেই। পবিত্র আশুরার এই দিনে সাম্য, ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,পবিত্র আশুরা মানব ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এ দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।

মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গ কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় তাঁদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আশুরার মহান শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সকলের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, প্রায় এক হাজার ৩৩৫ বছর আগে এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। ১০ মহরম হযরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তাঁর পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন।

এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাঁদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সকলকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়।

এ ছাড়া ১০ মহররম আশুরার দিন মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আবার এদিন কেয়ামত ঘটাবেন। এর বাইরে এদিন হযরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে রক্ষা পেয়েছেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। এ রকম অসংখ্য ঘটনায় তাৎপর্যমন্ডিত এ দিনটি মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের সাথে পালন করে থাকে।