মুশফিকুর রহিম নাকি কেন উইলিয়ামসনের উইকেট। কোনটা সবচেয়ে বড়? এ নিয়ে তর্কে জড়ানোর কোনো মানে নেই। নিশ্চিতভাবেই কেন উইলিয়ামসন। সবশেষ চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি। ২৯ সেঞ্চুরি নিয়ে বর্তমানে খেলা চালিয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আছেন তৃতীয় স্থানে। তার উইকেটটা আগেভাগে বাগিয়ে নেওয়া মানে অর্ধেক কাজ শেষ।
মিরাজের বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে শাহাদাতের হাতে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন সাবেক কিউই অধিনায়ক। নিচু হয়ে আসা বল দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন শাহাদাত। তাতে উল্লাসে ফেঁটে পড়ে স্বাগতিক শিবির। কেননা উইলিয়ামসন ২২ গজে থিতু হয়ে গেলে কতটা ভোগাতে পারেন তা কল্পনারও বাইরে। কিন্তু তাকে ফেরানোর আগে-পরের মিরপুরের চিরচারিত ২২ গজে যা হলো তা নিশ্চিতভাবেই কল্পনার বাইরে ছিল না!
বল দিনের শুরু থেকে ছোবল দিচ্ছে। অসমান বাউন্স। ধীরগতির উইকেট। স্বাগতিক দল তো জানতই এমন কিছু হবে। সফরকারীদেরও ধারণার বাইরে ছিল না। তারপরও ১৫ উইকেট বড্ড বাড়াবাড়ি কিনা তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন তোলাই যায়।
আগে ব্যাটিং করতে নেমে মাত্র ১৭২ রানে অলআউট। শেষ বিকেলে নিউ জিল্যান্ড খেলতে নেমে স্কোরবোর্ডের চিত্রটা এরকম, ৫৫/৫। হাতে ৫ উইকেট রেখে ১১৭ রানে পিছিয়ে নিউ জিল্যান্ড। প্রথম দিনের পারফরম্যান্সের হিসেবে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু এমন উইকেটে দুই দলের ব্যাটসম্যানদের যে কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তা বলতে দ্বিধা নেই।
উইকেট, ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ছাপিয়ে ম্যাচের প্রথম দিন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে মুশফিকুর রহিমের আউটে। ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পথ খুঁজে পায় শাহাদাত ও মুশফিকের ব্যাটে। দুজনের দায়িত্বশীল জুটিতে পরিস্থিতি সামলে দলের রান এগিয়ে যায় ভালোভাবে। দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে তারা কোনো সুযোগ দিচ্ছিলেন না বোলারদের। থিতু হওয়া প্রায় আড়াই ঘণ্টার সেই জুটি ভাঙে মুশফিকের মতিভ্রমে! বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্যা ফিল্ড’ আউট হন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
পেসার কাইল জেমিসনের স্টাম্পের ওপর করা ডেলিভারি ঠিকঠাক ব্লক করেছিলেন মুশফিক। বল পয়েন্টের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু মুশফিক ইচ্ছাকৃতভাবে বল ডান হাত দিয়ে ধরে সরিয়ে দেন। যা ক্রিকেটের আইনের বাইরে। মুশফিক ব্যাট দিয়ে বল সরালে কোনো ঝামেলা হতো না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে বল হাত দিয়ে সরানোর সুযোগ নেই। নিউ জিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা এতে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউটের আবেদন করেন। তৃতীয় আম্পায়ার ভিডিও রিপ্লে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে যান, মুশফিক আউট। ২০১৭ সালে এটিকে ‘অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড’ এর অন্তর্ভুক্ত করে এমসিসি। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই আউট হন মুশফিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১তম এবং টেস্টে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘হ্যান্ডলড দ্য বল’ আউট হলেন এই ক্রিকেটার।
ওই জুটি ভাঙার পর তাসের ঘরের মতো ভাঙতে থাকে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। মুশফিকের ওমন কাণ্ডের সময়ে ধারাভাষ্যে ছিলেন তামিম ইকবাল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কের আজই অভিষেক হলো ধারাভাষ্যে। কাকতালীয়ভাবে মুশফিকের ব্যাটিংয়ের সময় তামিমের হাতেই ছিল মাইক। সতীর্থর ওমন কাণ্ডে তামিম বলে উঠেন, ‘কেন যেন মনে হচ্ছে মুশফিক বিপদে পড়তে যাচ্ছে।’ নিউ জিল্যান্ডের আবেদনে তৃতীয় আম্পায়ার সাড়া দিলে ড্রেসিংরুমের লম্বা পথ ধরেন মুশফিক। তামিম মাইকে বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না। লম্বা সময় মুশফিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়ে দিয়েছে। এরকম ভুল কিভাবে করে। এই আউটের কোনো অজুহাত হতে পারে না। স্কোরবোর্ড হুট করেই পরিবর্তন হয়ে গেল।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকা তামিম ধারাভাষ্যের সুযোগ হাতছাড়া করেননি। বিপিএল দিয়ে তার ক্রিকেটের ফেরার কথা রয়েছে। তবে সামনে তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেখা যেতে পারে সেই আভাসও দিয়ে রাখলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখানো শেষ হয়েছে কি না জানা নেই।’ তামিম ফিরবেন কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে। কিন্তু মূল আলোচনা যে তার পরিবর্তে যারা এখন খেলছেন তারা কী সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন।
এলোমেলো শটে জাকির আজও উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। উইকেটের খাতা তিনিই খুলেছিলেন। পরে জয়, মুমিনুল, শান্ত কেউই হাল ধরতে পারেননি। শুরুর ৪ উইকেট ভাগাভাগি করেন দুই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ পাটেল ও দলে ফেরা মিচেল স্যান্টনার। এরপর শাহাদাতকে সঙ্গে নিয়ে মুশফিকের লড়াই শুরু। যে লড়াই অন্তত আড়াই’শ রানের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। আরও ভালো কিছুরও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মুশফিকের হতশ্রী আউটে বাংলাদেশের ইনিংসেই লণ্ডভণ্ড। সঙ্গী হারানোর পর শাহাদাত বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফিলিপসের বলে উইকেটের পেছনে লেগ সাইডে ক্যাচ দেন ৩১ রানে।
এরপর মিরাজ (২০), নুরুল হাসান (৭), নাঈম হাসান (১৩) উইকেটে এসেছেন আর গিয়েছেন। বল হাতে স্যান্টনারের সঙ্গে ৩টি করে উইকেট নেন ফিলিপস। এজাজ পেয়েছেন ২ উইকেট।
সিলেট টেস্টে তাইজুলের ১০ উইকেটে আড়াল হয়ে থাকা মিরাজ ঢাকায় বল হাতে জ্বলে ওঠেন শুরুতে। তাইজুলকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা ওড়ানো কনওয়ে অফস্পিনার মিরাজকে সামলাতে পারেননি। তার ভেতরে ঢোকানো বল ছেড়ে দিয়ে বোকা বনে যান কনওয়ে। তাইজুল থেমে থাকেননি। টম লাথামকে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করান নিচু হয়ে যাওয়া বলে। সেখানে সোহান দারুণ ক্যাচ নিয়ে অবদান রাখেন। বাঁহাতি স্পিনারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন হেনরি নিকোলস। চাপ কমাতে অহেতুক ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন।
এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যে উইকেটের প্রত্যাশায় ছিল গোটা দল। মিরাজ পেয়ে যান উইলিয়ামসনের উইকেট। ১৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৩ রানে থেমে যান সিলেট টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান। এক বল পর টম ব্লান্ডেল মিরাজের বল জোড়া পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। আলোকস্বল্পতার কারণে নির্ধারিত সময়ের ১৪ মিনিট আগে শেষ হয়েছে প্রথম দিনের খেলা। নতুন বলের দারুণ ব্যবহার করে বাংলাদেশ দুর্দান্ত বোলিং করেছে তা বলতে দ্বিধা নেই। তবে সফরকারী ব্যাটসম্যানরাও তাড়াহুড়া করে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। প্রথম সেশনে ৪ উইকেট, দ্বিতীয় সেশনেও তা–ই। শেষ সেশনে উইকেট পড়ল ৭টি। দিন যত গড়াবে সংখ্যাটা তত বাড়তে পারে। স্পিনে নাকানিচুবানি খেতে হবে তা জেনেই তো সব আয়োজন।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com