স্বপ্নের পদ্মা সেতু পেয়ে উচ্ছ্বসিত বাগেরহাটের কৃষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে পদ্মা সেতু এ জেলার কৃষি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বাগেরহাটে কৃষক পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮। এ জেলা থেকে চলতি অর্থবছরে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪০০ টন সবজি উৎপাদিত হয়েছে। যার সিংহভাগই ঢাকায় যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় জেলার উৎপাদিত শাক-সবজি, মুরগি, দুধ, ডিম এখন সরাসরি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। এতে ভালো দামও মিলবে। পাশাপাশি দ্রুত পচনশীল এসব পণ্য নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না সংশ্লিষ্টদের।
বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার কৃষক মোল্লা আব্দুল আজিজ টিটু বলেন, বিদেশ থেকে ফিরে কৃষি খামার গড়েছি। আমার খামারে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। অফ সিজনের ফসল উৎপাদন করেও তেমন লাভবান হতে পারি না। কারণ স্থানীয় বাজারে বেশি দাম দিয়ে কেউ এসব পণ্য কিনতে চায় না। ঢাকার পাইকারি ক্রেতারা নানা অজুহাতে পণ্যের ন্যায্য দাম দেন না। তবে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। এখন থেকে প্রয়োজনে নিজে পিকআপে পণ্য ঢাকার বাজারে বিক্রি করবো। এতে ভালো দাম পাওয়া যাবে।
মোল্লাহাট উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ‘ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ১০ বছর দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিতে কাজ করেছি। এখন আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে রক মেলন, ওয়াটার মেলন, হানী ডিউ মেলন, ক্যাপসিকামসহ বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন করছি। এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঠাই। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য পাঠাতে প্রচুর সময় লাগতো। সেতু চালু হয়েছে। এখন দ্রুত এসব পণ্য গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। ফলে পণ্যের গুণগত মান ভালো থাকবে। পদ্মা সেতু কৃষকের সচ্ছলতার প্রতীক।
ফকিরহাট উপজেলার অর্গানিক বেতাগার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া বেগুন, লাউ, টমেটো, শসা, ঢেঁড়শসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এসবের বাড়তি কোনো মূল্য নেই। অনেক দিনের স্বপ পদ্মা সেতু হলে এসব ফসল ঢাকার বাজারে বিক্রি করবো। সেতু চালু হওয়ায় সে স্বপ্ন পূরণের পথে।
কচুয়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের চাষি আ. রহমান পাইক বলেন, ক্ষেতে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ টমেটো উৎপাদিত হয়। শেষ দিকে ক্ষেত থেকে টমেটো তুললে শ্রমিকের মজুরিই হয় না। তাই তখন টমেটো তোলা হয় না। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হয় কষ্টের ফসল। ঠিক সেই সময় ঢাকার বাজারে টমেটোর চাহিদা থাকে। পদ্মা সেতুর ফলে এখন আর ক্ষেতে টমেটো নষ্ট হবে না।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি লিয়াকাত হোসেন লিটন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে পাল্টে যাবে জেলার কৃষি খাত। দ্রুত পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারায় ব্যবসায়ীদের কাছে কৃষকরা জিম্মি হয়ে থাকবে না। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাটে প্রচুর সবজি-ফল উৎপাদিত হয়। এসব সবজি-ফল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এছাড়া বাগেরহাটের টমেটোর সুনাম রয়েছে সারা দেশে। কৃষকদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য দাম পাওয়ার প্রধান অন্তরায় ছিল পদ্মা নদী। পদ্মা সেতু চালুর ফলে জেলার কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে।
বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল আর ফেলে দিতে হবে না।