পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের ২ বছর পূর্তি আজ। নিজেস্ব অর্থায়নে ২০১৫ সালের এই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল কাজের শুভ সূচনা করেন। এ দিন থেকেই একটি নবদিগন্তের সূচনা হয়। ইতোমধ্যে সেতুটির ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে ১৫০ মিটার একটি স্প্যানও মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে। এখন পদ্মাসেতু বাস্তবেই মানুষ চোখে দেখতে পান। প্রস্তুত রয়েছে আরো ৩টি স্প্যান। গতকাল পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ ৫২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মূল পদ্মাসেতুর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের। পুরোদমে চলছে পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ। একদিকে নদী শাসন, এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মান কাজ অন্য দিকে সেতুর টোল প্লাজা সম্পূর্ন প্রস্তুত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনার সর্বশেষ কাজ দেখে মানুষ স্বস্থি প্রকাশ করছেন। ২০০১ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ার পদ্মা পাড়ের মত্স্য আড়তের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সরকার পরিবর্তনের পাশাপাশি থেমে যায় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ। চার দলীয় জোট সরকার ও সেনাশাসিত ফখরুদ্দিনের সরকার এ নিয়ে আর কাজ করেনি। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠনের পর আবারো পদ্মা সেতু নিয়ে তত্পরতা শুরু করে। শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পূণর্বাসনের কাজ। চুক্তি হয় বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকাসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের কারণে মাঝ পথে থেমে যায় পদ্মা সেতুর কাজ। এরই মধ্যে কেটে যায় ১৪টি বছর। প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে পদ্মা সেতর মূল কাজ উদ্বোধন করেন এবং সম্পুর্ন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষনা দেন। বর্তমানে প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে পদ্মা সেতু। এ্যাপ্রোস সড়ক নির্মান হয়েছে শতভাগ।
চলছে ৩৯, ৪০, ৪১ নম্বর পিলারের কাজ। অল্প দিনের মধ্যেই এসব পিলাবে বসবে স্প্যান। এদিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে এ এলাকায় চলছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। পদ্মাসেতুর পাইলিং চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাইড্রোলিক হ্যামারের সাহায্যে। তৈরি হয়েছে এ্যাপ্রোস সড়ক, চলছে নদী শাসননের কাজ, ওয়ার্কশপে স্প্যানসহ সেতুর নানা সরজ্ঞাম প্রস্তুত, আবার কোথাও বা তীর থেকে ক্রেনের সাহায্যে জাহাজে মালামাল উঠানোর কাজ চলছে। দেখলেই বুঝা যায়, পদ্মা সেতুর কাজ চলছে পুরোদমে। ৪২টি পিলারের ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্ববৃহৎ এই সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। ১৫০ মিটারের ৪১টি স্প্যান বসানো হবে এতে।
এছাড়াও সেতুর দুই পাড়ে ১২টি করে আরো ২৪টি পিলার থাকছে। সর্বমোট ৬৬টি পিলার থাকছে পদ্মাসেতুতে। এ ছাড়াও মূল সেতুর ৪০টি পিলারে ৬টি করে ২৪০ এবং দু’পাড়ের দু’টিতে ১২টি করে ২৪টি অর্থ্যাৎ ২৬৪টি পাইল বসানো হচ্ছে। পদ্মা সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রীজ-এর বাংলাদেশী কান্ট্রি প্রধান মি. রেম ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু মূল নির্মাণ কাজে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দেশী বিদেশী লোকবল কাজ করছে। এদের মধ্যে ৫শ’ চীনা নাগরিক ও ৩ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক ও কর্মকর্তা বিশাল এই নির্মাণ যজ্ঞে কাজ করছে। সার্বিক কাজে আছে প্রায় বিশ হাজার শ্রমিক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগ্রেড সেতু কাজের তদারকি করছেন। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ১১ শ’ হেক্টরেরও অধিক জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর বিশাল কর্মযজ্ঞ এখন মাওয়া ও জাজিরা ও এর আশপাশের গোটা এলাকা ছাড়াও পদ্মার বুকে। পদ্মা এখন অনেকটা শান্ত, তাই নদীতে ভাসমান বড় বড় ক্রেন কাজ করে চলছে নির্বিঘ্নে। বড় আকারের ড্রেজারগুলোও তাদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করছে। চলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাধর হাইড্রোলিক হামারের পাইলিং কাজ। তাই পদ্মার যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই পদ্মাসেতু নির্মাণ যজ্ঞ চোখে পড়ে। স্বপ্নের এই সেতুর বাস্তবায়নের পথে যেতে দেখে এই অঞ্চলের মানুষ বেশ খুশি।