পদ্মা সেতুর কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর ৫৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন পাইলিং কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রলিক হ্যামার।
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার জার্মানির তৈরি হ্যামারটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। পদ্মা সেতুর জন্য অর্ডার দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৩ হাজার কিলোজুল এবং ২ হাজার ৪০০ কিলো জুল ক্ষমতার আরও ৩টি হ্যামার পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে।
সরেজমিনে গতকাল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ পদ্মা সেতু প্রকল্পের পদ্মা নদীর ১৩ নম্বর পিলারে গিয়ে দেখা গেছে, এটি সেটিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৩ নম্বর পিলারে এরই মধ্যে গাইডিং ফ্রেম (মঞ্চ) তৈরি করা হয়েছে। এই ফ্রেমের সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে ৭০ মিটার দীর্ঘ পাইল। এ পাইলের উপরই হ্যামারটি গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে। মূলত একটি ভাসমান বার্জ থেকে হ্যামারটি ড্রাইভ করা হচ্ছে। বার্জের মধ্যে রয়েছে ৬টি স্টেশন, যা দেখতে অনেকটা কনটেইনারের মতো। এসব স্টেশনে রয়েছে এটি ড্রাইভের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। রয়েছে ডিজিটাল বা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। দেখা গেছে, হ্যামারটি পাইলের ওপর স্থাপনের পর এই স্টেশন থেকে হাইড্রোলিক প্রেসার দিয়ে হ্যামারটি ড্রাইভ করা হচ্ছে।
হাইড্রোলিক প্রেসার পেয়ে হ্যামারটি উপর দিকে উঠে আবার নিচের দিকে আছড়ে পড়ছিল পাইলের ওপর। এভাবেই পাইলগুলো পদ্মার তলদেশে গভীর হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, হ্যামার প্রতি মিনিটে ৩৫ থেকে ৪০ বার পাইলের ওপর আঘাত করতে পারে। তাতে একটি পাইল বসালে ৮ ঘণ্টার মতো সময় প্রয়োজন হয়। তবে নানান সমস্যা ও পাইল ঝালাই করে জোড়া দিয়ে একটি পাইল বসাতে ৭ থেকে আট দিন সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দু-এক দিন কম-বেশি সময়ও লাগে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, পদ্মা সেতুর চারটি পিলারে একটি করে পাইল বাড়তে পারে। তাহলে ছয়টির স্থলে সাতটি করে পাইল স্থাপন করতে হবে। নদীর তলদেশের মাটি নরম থাকার কারণে মাওয়া প্রান্তের ৬, ৭, ৮ ও ১০ নম্বর পিলারে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি ডিসেম্বর মাসেই চারটিসহ পদ্মা সেতুর বাকি ১৪টি পিলারের ডিজাইন চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। পদ্মা নদীর সে াতে যেমন বৈচিত্র্যময়, ঠিক নদীর তলদেশেও রয়েছে নানা বৈচিত্র্যময় মাটির গঠন। তাই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ।