পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকা-বরিশাল: ভোগান্তির সঙ্গে কমছে ভাড়া, বাঁচবে সময়

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

পদ্মা সেতুর টোলসহ নতুন নির্ধারিত ভাড়ায় ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রীদের বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে না। আর হিসাব কষলে যাত্রাপথের দুরত্ব,ভোগান্তি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াও কমছে।

বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের তথ্যানুযায়ী, ঈগল, হানিফ, সাকুরা,গোল্ডেনলাইনসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস নিয়মিত বরিশাল-ঢাকা রুটে সরাসরি যাত্রী সেবা দিয়ে আসছে। যার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি বাস রাজবাড়ি ও মানিকগঞ্জের মধ্যবর্তী দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে।

 

পক্ষান্তরে যেখানে পদ্মাসেতু হচ্ছে সেই মাদারীপুর ও মুন্সিগঞ্জের কাঠালবাড়ি-মাওয়া ফেরি পার হয়ে বরিশাল-ঢাকা রুটে সরাসরি তেমন একটা বাস চলাচল করে না বললেই চলে। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, কাঠালবাড়ি-মাওয়া রুটে বেশিরভাগ যাত্রী ভেঙে ভেঙে যাত্রা করেন। এক্ষেত্রে বরিশাল থেকে কাঠালবাড়ি লঞ্চঘাট পর্যন্ত বিআরটিসি ও মাইক্রোবাসে করে যাত্রীরা যাতায়াত করেন। এরপর ফেরি, স্পিডবোট নয়তো লঞ্চে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে মাওয়া প্রান্তে পৌঁছেন।

এ ক্ষেত্রে যানবাহনের প্রকারভেদে সাড়ে ৪ শ থেকে ৬ শ টাকা পর্যন্ত যাত্রীরা খরচ করেন। যদিও এ পথ ধরে সাকুরা,সার্বিক ও সুগন্ধাসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস সরাসরি ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করছে। যারমধ্যে সাকুরা পরিবহনের মাত্র একটি বাস প্রতিদিন চলাচল করে। আর এ সকল বাসে ভাড়াও ৫০০ টাকার নিচে কেউ নিচ্ছেনা।

অপরদিকে আরিচা হয়ে গেলে সব পরিবহনের বাসগুলোতে সাড়ে ৫ শ থেকে ৬ শ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন যাত্রীরা। এ রুটে এসি বাসের ভাড়া আরও বেশি। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিআরটিএর সর্বশেষ নির্ধারণ করা ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে বরিশাল পর্যন্ত ২৪২ কিলোমিটার পথের টোলসহ আদায়যোগ্য যাত্রীপ্রতি বাস ভাড়া ( প্রতি কিলোমিটার১.৮০ টাকা হিসাবে)নির্ধারণ করা হয় ৬২৬ টাকা।

আর ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে বরিশাল পর্যন্ত ১৫৬ কিলোমিটার পথের টোলসহ যাত্রীপ্রতি আদায়যোগ্য বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৪০২ টাকা। সেখানে বর্তমানে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলরত বাসের টোল সংযোজনপূর্বক হালনাগাদ বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪১২ টাকা ৩২ পয়সা।

অর্থাৎ কাগজে কলমে বেড়েছে মাত্র ১০ টাকা ৩২ পয়সা। অথচ এ রুটে বর্তমানে ফেরি পাড়াপাড়ের বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে সিটপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর বার বার পরিবহন পাল্টে ঢাকায় যেতে চাইলেও খরচ আরও বেশিই গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। অপরদিকে আরিচা দিয়ে গেলে পদ্মা বহুমুখী সেতু দিয়ে চলাচলকারী বাসের থেকে ২১৪ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হবে। সেক্ষেত্রে সময়ও প্রায় দেড়গুন বেশি লাগবে।

এদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলরত বাসের টোল সংযোজনপূর্বক হালনাগাদ ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও এক্সপ্রেসওয়ের টোল সংযোজন করা হয়নি। আর গত অর্থবছর এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের জন্য যে টোল অনুমোদন করা হয়েছে, সেটি সংযোজন করলে এ রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আর মাত্র ১২-১৩ টাকা বাড়তে পারে। তারপরও পদ্মাসেতু হয়ে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রীদের ৪৫০ টাকার নিচেই ভাড়া গুনতে হবে।

যদিও বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ আশা করছেন ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করবে সরকার, সেইসাথে পদ্মাসেতুর টোলও কমানোর বিবেচনা করবে। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের দপ্তর সম্পাদক অমল চন্দ্র দাস বলেন, ভাড়া ও যাতায়াত পথের সময়ের হিসেবে আরিচার থেকে মাওয়া রুট জনপ্রিয় সাধারণ যাত্রীদের কাছে। তবে যারা কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়া বাসে উঠে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছাতে চান তারা আরিচা রুটের গাড়িগুলো ব্যবহার করছেন।

তবে পদ্মাসেতু আমাদের এ অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ । এ সেতুর কারনে সাধারণ যাত্রীসহ পরিবহন চালক-শ্রমিকদের ভোগান্তি কমবে। মালিকও নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। তবে বাস মালিকরা আশা করছেন পদ্মাসেতুর টোল কমার সাথে সাথে ভাড়াও পুনঃনির্ধারণ করা হবে।

এদিকে যাত্রীরা বলছেন, সরকার বাসের ভাড়া নির্ধারণ করেছেন হিসেব কষেই। যেখানে সবার লাভের কথাই চিন্তা করা হয়েছে। মাসুক কামাল নামে এক যাত্রী বলেন,এখন ভাড়া বাড়ানোর চিন্তা না করে যাত্রীসেবার কথা চিন্তা করা উচিত পরিবহন মালিকদের।