অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।শুক্রবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে এ চুক্তি হয়। এটিই হচ্ছে দেশটির সঙ্গে করা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ঋণ চুক্তি।
স্বপ্নময় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার এ চুক্তির আওতায় ঋণ দিচ্ছে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা।
চীনের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় চীনা এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও এশিয়া উইংয়ের প্রধান মো. জাহিদুল হক আর চীনা এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট সানপিং। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি কর্মকর্তারা এবং চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলে থাকা ইআরডির যুগ্ম সচিব ড. একেএম মতিউর রহমান চুক্তির বিষয়টি জানিয়েছেন, ইআরডির অপর কর্মকর্তা সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট চিফ মাসুমা আখতারকে। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মো. জাহিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ইআরডির যুগ্ম সচিব ড. একেএম মতিউর রহমানসহ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪ জন প্রতিনিধি।
সূত্র জানায়, চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হলেও একের পর এক জটিলতার কারণে আটকে যায় এ চুক্তি। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শঙ্কার মধ্যে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নানা আলাপ-আলোচনার পর অবশেষে চুক্তি স্বাক্ষর হলো।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময়ই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তী সময়ে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। এ জন্য চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্বিত হতে থাকে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে এ প্রকল্পে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। সেটি না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে ডিসেম্বরে চুক্তি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ইআরডি।
সে সময় চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয় এ ঋণ চুক্তির জন্য স্টেট কাউন্সিলের অনুমোদনের পর চীনের প্রেসিডেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে কেটে যায় জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাস। এই ফাঁকে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চলে চিঠি চালাচালি এবং বৈঠক। এসব বৈঠকে ঋণের বিভিন্ন শর্তসহ নানাদিক সমঝোতা হওয়ায় এখন চুক্তিটি আলোর মুখ দেখল।
২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঋণ চুক্তি বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন সংশয়ের মুখে পড়ে।
এ অবস্থায় শুক্রবার ঋণ চুক্তি হলেও প্রকল্পটির ব্যয় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন পড়েছে। এ জন্য ইতিমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
গত ২৪ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঋণের শর্ত : চীনের কাছে নিতে যাওয়া এ ঋণের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত চূড়ান্ত হয় সেগুলো হচ্ছে, পুরো ঋণটিই হবে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট অর্থাৎ এ ঋণের ক্ষেত্রে চীন দেবে ৮৫ শতাংশ অর্থ আর বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে ১৫ শতাংশ অর্থ। তবে যদি গভর্নমেন্ট কনসেশনাল ঋণ হতো তাহলে পুরোটাই চীনা অর্থায়ন হতো। কিন্তু তাদের নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণে একসঙ্গে দুটো অপশন থাকতে পারবে না।
এছাড়া সুদের হার হবে ২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ৬ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর। ব্যবস্থাপনা ফি গুনতে হবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। প্রতিশ্রুতি ফি দিতে হবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। সেইসঙ্গে চুক্তি কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৩ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার দিতে হবে চীনা এক্সিম ব্যাংককে।