জারিন তাসনিম রাফা। ২৩ বছরের তরুণী। সবাই তাকে ডাকে জারিন নামে। তার পদচারণার চঞ্চলতায় উচ্ছ্বাসিত থাকতো সর্বত্র। পরিবারের ভরসা ছিল এই একটি নাম। প্রাপ্তি অার প্রত্যাশার ছোট্ট জীবনে বড় কোনো স্বপ্ন ছিল না তার। স্বপ্ন দেখতো সে একজন নামকরা ডাক্তার হবেন। সমাজের অসহায় গরিব মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেবেন। তার এমন অালোকিত স্বপ্নের অালো কিছু দিন অাগেও ঝলমল করতো বাবা-মায়ের মনে।
শিক্ষা জীবনের প্রতিটি সিঁড়ি বেয়ে স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি এসেও যেন তা অধরাই থেকে যাচ্ছে জারিনের। আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সে। অার কিছুদিন পরই শিক্ষাজীবন শেষে শুরু হতো নতুন জীবন। স্বপ্ন দেখা সেই ডাক্তার হওয়ার বাস্তবায়ন ছিল একেবারেই নিকটে। কিন্তুু বাবা-মায়ের আশাকে নিরাশায় রেখে এখন তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন থমকে অাছে অ্যাপোলো হাসপাতালের বেডে। সেখানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জারিন তাসনিম রাফা।
তিন মাস অাগে ক্যান্সারের মত দূরারোগ্য ব্যাধিতে (এমএএল) আক্রান্ত হন জারিন। রোগটি ধরা পড়ার পর দেশের বাহিরে নিয়েও কোনো প্রতিকার মিলেনি তার। বাংলাদেশে এর চিকিৎসা না থাকায় জারিনকে নেয়া হয় ভারতের বোম্বের টাটা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন তার বোনমেরু পুনঃস্থাপন করতে হবে। যার চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৮০ লাখ টাকা।
এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যবস্থা করা জেরিনের বাবার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসায় প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। বর্তমানে অ্যাপোলো হাসপাতালে জারিনকে কেমোথেরাপি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দ্রুত তার বোনমেরু পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন। নয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
জারিনের স্বপ্নগুলো ক্রমশই অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয়ে পড়ছে। কিছু দিন আগের সেই চঞ্চলতার পদচারণা এখন ক্রমেই মলিন হচ্ছে। নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে উচ্ছ্বাসতায় ভরে থাকা সতেজ প্রাণ। এত অর্থ অাদৌ সংগ্রহ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন জারিনের পরিবার।
পটুয়াখালির গলাচিপার বাশতলা গ্রামের এম এ বাশারের মেয়ে জারিন। পরিবারের সবাই দীর্ঘদিন যাবত রাজধানীতেই থাকেন। পরিবারের বড় সন্তান জারিন। তার বাবা এম এ বাশারের নিউ মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। তবে গত বছরে ওপেন হার্ট সার্জারি হওয়ায় এখন তিনি আর কোনো কাজ করতে পারেন না। ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
জারিনের বাবা এম এ বাশার বলেন, জারিন অসুস্থ হওয়ার পর (তিনমাস আগে) বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া নামে এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। এ চিকিৎসা ওই হাসপাতালে না থাকায় তাদের পরামর্শে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে একটা কেমোথেরাপি দেয়ার পর তাকে নেয়া হয় ভারতের টাটা হাসপাতালে। সেখানে অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি।
তিনি বলেন, সেখানের চিকিৎসকরা বলেছেন, তার চিকিৎসায় বাংলাদেশি প্রায় ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এত টাকা ব্যবস্থা না করতে পেরে তাকে অাবার দেশে নিয়ে অাসি। এখনও তাকে কেমোথেরাপি দিয়ে রাখতে হচ্ছে। এতেই প্রায় এখন পর্যন্ত ২২ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে।
জারিনের বাবা অারও বলেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়ে সরকারে কাছে লিখিত আবেদন করেছি। জারিনও প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠির মাধ্যমে আকুতি জানিয়েছে। তবুও দেশবাসী ও বিত্তবানদের এগিয়ে অাসার অাকুতি জানাই।
জারিনের ভাই অর্ণব বলেন, জারিনের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ টাকা সাহায্য পেয়েছি। তবে সমাজের বিত্তবান এবং হৃদয়বান ব্যক্তিরা একটু এগিয়ে অাসলে বোনের চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ হতো।
অসুস্থ জারিনও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, সকলের কাছে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করে বলছি, আমি সুস্থ হয়ে সবার সেবা করতে চাই। এ দেশে কখনও কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি। অামিও চিকিৎসায় সুস্থ হব। অাশা করছি, অামার চিকিৎসায় যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন তা দেশবাসী সকলে মিলে সহযোগীতা করলে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এ জন্য অামি সকলের নিকট অাবেদন করছি, অামাকে সাহায্য করুন। অামাকে বাঁচান।
জারিনের চিকিৎসায় কেউ অর্থ পাঠাতে চাইলে নিম্নোক্ত ঠিকানায় পাঠানোর অনুরোধ করেছেন তার বাবা।
Account Name : M A BASHARAccount no : 1781510147962Dutch Bangla Bank, Rampura BranchMobile No : +880 1680909120 (জারিনের বাবা)