পটুয়াখালীতে স্ত্রীকে হত্যা করে সন্তান নিয়ে স্বামী লাপাত্তা

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বরিশালের পটুয়াখালীর দুমকীকে স্ত্রীকে নির্যাতনের পর মুখে বিষ দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে পাষন্ড এক স্বামী বিরুদ্ধে। ঘাতক স্বামীর নাম আল আমিন খান (২৩)। সে পটুয়াখালীর দুমকী থানার মুরাদীয়া ইউনিয়নের জাফর খানের পুত্র। আর নিহত গৃহবধু বাকেরগঞ্জ থানার ৭নং কবাই ইউনিয়নের পেয়ারপুরের অব্দুল মোতালেব শিকদারের ১ মাত্র কন্যা নিপা আক্তার (১৯)।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার এ হত্যার ঘটনা ঘটে। স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ঘরের মধ্যে ফেলেরেখে ১ বছর বয়সি পুত্র সন্তান ওসমানকে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে অভিযুক্ত স্বামী আল আমিন। এসময় প্রতিবেশিরা ঘটনার আলমত আজ করতে পেরে তাদের ঘরের মধ্যে ঢুকে গৃহবধু নিপাকে মৃত্যু অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় তারা বিষয়টি গৃহবধুর স্বজনদের মোবাইল ফোনে জানালে তারা এসে পটুয়াখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন নিপাকে হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তার মৃত হয়। সূত্রে জানা গেছে, গত ২ বছর আগে পটুয়াখালীর দুমকী থানার মুরাদীয়া ইউনিয়নের জাফর খানের পুত্র আল আমিনের সাথে বাকেরগঞ্জ থানার ৭নং কবাই ইউনিয়নের পেয়ারপুরের অব্দুল মোতালেব শিকদারের ১মাত্র কন্যা নিপা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বর আল আমিনকে নগদ ২ লাখ টাকা যৌতুক হিসাবে প্রদান করা হয়।

বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের আল আমিন যৌতুকের দাবী করে। কিন্তু সে আর পিতার কাছ থেকে যৌতুক এনে দিতে পারবে না বলে স্বামীকে সাফ জানিয়ে দিলে যৌতুকলোভী স্বামী আল আমিন প্রাইয় স্ত্রীকে নির্যাতন করতো। এরই মধ্যে নিপা ওসমান নামের একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। ব্যবসার জন্য টাকা লাগবে জানিয়ে স্বামী আল আমিন যৌতুকের দাবীতে নিপার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। যৌতুকের দাবী অব্যহত রেখে স্বামী আল আমিন আপন মামাতো বোনের সাথে পরোকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি স্ত্রী নিপার নজরে আসলে গত ১৭ ফেব্র“য়ারি স্বামীকে পরকিয়া প্রেম থেকে বিরোত থাকতে অনুরোধ জানায় এবং স্বামীর পরকিয়া প্রেমিকাকে ফোন দিয়ে তার স্বামীকে আর ফোন না দিতে শাসিয়ে দেয়। বিষয়টি স্বামী আল আমিন জানতে পেরে স্ত্রী নিপাকে বেধরক মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে আতœহত্যার চেস্টা করেছে বলে অপপ্রচার চালায়।

এসময় প্রতিবেশিরা গৃহবধুর স্বজনদের খবর দিলে নিপার দুর সম্পকের ভাই রুমান তাকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগেই গৃহবধুর নিপার মৃত্যু হয়েছে বলে দায়িত্বরত চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এসময় স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে পাষন্ড স্বামী আল আমিন তাদের ১ বছর বয়সি পূত্র ওসমানকে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। এমনকি তাদের ঘর তালাবদ্ধ করে স্ব-পরিবারে গা ঢাকা দিয়েছে। আজ সকাল ১১টার দিয়ে ঘাতক আল আমিনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কোন সদ্যসকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে গৃহবধুর নিপার পরিবারের সকল সদস্য রাজধানীতে অবস্থায় করায় খবর পেয়ে তাদের আসতে আসতে প্রায় একদিন লাগায় নিপার লাশ পটুয়াখালী হাসপাতালের মর্গে পড়ে রয়েছিল।

তবুও ঘাতক স্বামী আল আমিন ও তার পরিবারের কোন সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ খবর নেয়নি। উল্টো স্ব-পরিবারে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটুয়াখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসক জানায়, নিপাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে আনার পর থেকেই তার- গোটা শরীর ফুলে ফেপে উঠেছিল। তারই সাথে সাথে নাক, মুক,কান ও যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল প্রতিনিয়ত। এসময় উক্ত চিকিৎসক আরও জানায়, তার শরীলের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুমকী থানা পুলিশকে খবর দিলে দুমকী থানার এসআই মোঃ মানিক হাসপাতালে গিয়ে নিপার মরদেহ দেখে আসেন।

লাশ পোস মের্টাম করে গৃহবধুর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এবিষয়ে নিহত গৃহবধুর পিতা অব্দুল মোতালেব শিকদার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আল আমিন আমার কন্যাকে নির্যাতন করে মুখে বিষঢেলে হত্যা করেছে। আর তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। আর যে কোন পিতা তার কন্যাকে আর না হারায়। এবিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান নিহতের স্বজনরা। পটুয়াখালী থানার এসআই মোঃ মানিক জানান, পোসমের্টাম রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিপার মৃত্যুর সঠিক কারন জানাযাবে। এর আগে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবোনা। তবে নির্যাতনের পর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয়েছে।