শিশু সন্তানসহ স্বামীর সংসার থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কিশোরী বধু আয়শা বেগমকে। এখন দেড় বছরের শিশু সন্তান আব্দুল্লাহকে নিয়ে শ্রমজীবী বাবার সংসারে বোঝা হয়ে পড়ে আছে। নিজের অধিকার এবং সন্তানের ভরন পোষনের দাবিতে ধর্ণা দিচ্ছেন দ্বারে দ্বারে। পাষন্ড স্বামী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফের যৌতুকের দাবি মেটাতে না পারায় এই কিশোরী আয়শা বেগম দু’চোখে এখন সব অন্ধকার দেখছেন। কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের কাছিমখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করছিলেন আব্দুল লতিফ। আর ওই গ্রামে বাড়ি আয়শা বেগমের। বেতমোড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছিল।
স্ত্রী সন্তান থাকলেও কিশোরী আয়শার দিকে নজড় পড়ে শিক্ষক আব্দুল লতিফের। আয়শার বাবা আফজাল গাজী জানান, স্কুলের পাশেই বাড়ি থাকায় শিক্ষক আব্দুল লতিফ তার মেয়ে আয়শাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করত। বিভিন্ন ফন্দী-ফিকির চালায়। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ে সম্পন্ন হয় বলে আয়শা জানায়। তারপরও বিয়ের পরে অনেক ঝামেলা হয়। এর তিন/চার মাস পরে অন্যত্র বদলী হয় আব্দুল লতিফ। এরপরেও কয়েক মাস ভালই কাটছিল। তবে টানাপোড়েন, মারধর লেগেই থাকত। যখনই ছেলে আব্দুল্লাহর জন্ম হয় তখনই শুরু হয় যৌতুকের দাবিতে নানা তালবাহানাসহ চরম নির্যাতন। সতীন নাছিমার সংসারে দুই মেয়ে আর আয়শার একমাত্র ছেলে। সম্পত্তির ভাগাভাগি না দেয়ার ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন ফন্দীতে আয়শাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয় আব্দুল লতিফ। আব্দুল লতিফের বাড়ি মহিপুর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে।
আয়শা জানায়, গরম খুনতি দিয়ে মারত। ছেলে হওয়ার পরেই তার কপাল পুড়েছে। মারধর আর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাবার বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে বাবার ঘাড়ে বোঝা হয়ে ঝুলে আছে। সন্তান কিংবা স্ত্রীর ভরন-পোষন তো দুরের কথা, উল্টো বাবার বাড়িতে গিয়ে এ বছরের ১৫ মে যৌতুক চেয়ে গালাগাল হুমকি দিয়ে আসে। বর্তমানে আয়শা চরম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে নির্বাক হয়ে যায়। কিশোরী এই বধু আয়শা নিরুপায় হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পটুয়াখালীতে স্বামী আব্দুল লতিফ ও সতিন নাছিমা বেগমকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। বর্তমানে আয়শা তার শিশু সন্তান নিয়ে প্রচন্ড আর্থিক অনটনে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। তিনি স্বামীর অধিকারসহ নিজের ও সন্তানের ভরণ-পোষণের সহায়তা চেয়েছেন সমাজপতিদের কাছে। বর্তমানে এই শিক্ষক গঙ্গামতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরিরত রয়েছেন। তিনি জানান, বিয়ের পর থেকেই সে (আয়শা) তার বাবার বাড়িতে থাকছে। ১৫ দিন পর পর আমি যাইতাম। সে মামলা করছে পরে আর খবর নেইনা। ওই বাড়ি যাইনা। আর যৌতুক, মাইর-ধইরের ঘটনা মিথ্যা বলে দাবি করেন।