পটুয়াখালীতে প্রতারণা মামলায় জামিন নিতে আদালতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র!

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

পটুয়াখালীতে প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের একটি মামলায় ৮ বছর বয়সী চয়নকেও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে। আর এতে চয়নের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর।

এদিকে বুধবার চয়ন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট আদালত আবেদনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠান। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে শিশু চয়ন এবং তার ১৭ বছর বয়সী বোন তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করেন। এ ঘটনায় আদালতপাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইসলাম চয়ন। সহপাঠীরা যখন বিদ্যালয়ে ক্লাস করছে, সেই সময় চয়ন মা ও মামার হাত ধরে পটুয়াখালী আদালতের বারান্দায় ঘুরছে।

চয়নের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. সোলায়মান সিকদার জানান, কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি এলাকার বাসিন্দা মাসুম তালুকদার। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মাসুম তালুকদার মারা যাওয়ার পর জনৈক মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ৮৪ লাখ টাকা দাবি করে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের নামে এ বছরের ১২ আগস্ট পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় শিশু চয়নের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২২ বছর। প্রকৃত পক্ষে জন্মনিবন্ধন অনুয়ায়ী চয়নের জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৩। এছাড়া চয়নের বোন তুলাতলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া ইমরোজ তৃপ্তির বয়স ১৭ বছর হলেও তার বয়স ১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া চয়নের মা, দাদিসহ ওই মামলায় মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়।

এ ঘটনায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে আসামিরা হাজির হন। বুধবার আসামি শিশু চয়ন এবং তার পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত হলে আদালতে বিব্রত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিকুর রহমানের কাছে জামিনের আবেদন করলে বিচারক মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মইনুল হক তাৎক্ষণিকভাবে আসামি শিশু চয়ন এবং তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করেন এবং বাদীপক্ষের আইনজীবীকে তলব করেন।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোহসীন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে তিনি আদালতে কথা বলবেন বলে জানান।

পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থী এবং আইনজীবীদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

শিশু চয়নসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়— চয়নের পিতা মরহুম মাসুম তালুকদার কলাপাড়া উপজেলার লেমুপাড়া মৌজায় ১২ একর জমি বিক্রি করার জন্য ৮৪ লাখ টাকা নিলেও মৃত মাসুম তালুকদার জমির দলিল প্রদান করেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের মামলা দায়ের করা হয়।

বাদী মাসুম বিল্লাহ পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৮নং ওয়ার্ডের টাইন কালিকাপুর এলাকার (মিরাজ ভবন) বাসিন্দা, তার পিতার নাম আ. রব হাওলাদার।

এদিকে শিশু চয়নের মা সাবরিনা বিশ্বাস মনু বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমাদের হয়রানি এবং জমিজমা দখলের লক্ষ্যেই এ ধরনের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।