অভাবের তাড়নায় অটো গাড়ির বিনিময়ে নবজাতককে বিক্রি করে দিচ্ছেন মো. আলম মৃধা (৬০) নামে এক অভাবী বাবা। এ নিয়ে পটুয়াখালীর দশমিনায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের নলখোলা বন্দরের মৃত কাদের মৃধার ছেলে।
সন্তানের ভরণপোষণের অর্থ জোগান দিতে পারছেন না বলে তিনি নিজের সন্তানকে একটি বোরাক অটোর বিনিময়ে বিক্রি করে দেবেন বলে জানান। ভাড়ার টাকা না থাকায় দুদিন আগে জন্ম নেওয়া সন্তানটিকে একবারের জন্যও দেখতে পারেননি ওই হতভাগা বাবা।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, মো. আলম মৃধা ৪৫ বছর আগে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চরহোসনাবাদ গ্রামের আনন্দ মেলা সিনেমা হল এলাকার জয়নাল হাওলাদারের মেয়ে চন্দ্রি বিবিকে বিয়ে করেন। চন্দ্রি বিবি ২০ বছর আগে মারা যান। প্রথম স্ত্রীর সংসারে ৫ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
আলম মৃধা অভাবী হওয়ায় তিনি বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর বাড়িতে থাকতেন। প্রথম স্ত্রী চন্দ্রি বিবি মারা যাওয়ার ৭ বছর পর তিনি বহরমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের করিম হাওলাদারের মেয়ে হাওয়া বিবিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
আলম মৃধা জানান, প্রথম স্ত্রীর ঘরেই তিনি তার ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন। ওই ঘরের বারান্দায় ঠাই হয়েছে তার। ছেলের টানাটানির সংসারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটান তিনি। অভাবের কারণে দ্বিতীয় ঘরের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারেন না।
এর পরও সবশেষ দুদিন আগে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন তার স্ত্রী হাওয়া বিবি। খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছেন সদ্য জন্ম নেওয়া তার সন্তানটি তার মায়ের বুকের দুধ পান না।
সন্তানকে যে দুধ কিনে খাওয়াবেন সেই সামর্থ্যও তার নেই। সদ্য সন্তান জন্ম নেওয়া ছেলেশিশুর জন্য একদিকে তার জন্য যেমন আনন্দের, ঠিক তেমনি আবার বেদনারও।
আর ভাড়ার টাকার অভাবে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রিয় নবজাতক সন্তানের মুখটি এখন পর্যন্ত দেখতে পারেননি তিনি।
আলম মৃধা আরও জানান, তিনি পরিচিত একজনের মাধ্যমে বান্দরবান জেলার এক দম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন। যারা তার সন্তানকে কাগজপত্রে লিখে পড়ে সই-স্বাক্ষর নিয়ে একটি নতুন অটো গাড়ির বিনিময়ে কিনে নেবেন।
আলম মৃধার দাবি— ওই অটো গাড়িটি চালিয়ে রোজগার করে তিনি অন্য সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবেন। অভাবের কারণেই তিনি বাধ্য হয়ে প্রিয় সন্তানকে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
আজ বুধবার ১০ নভেম্বর বান্দবানের ওই দম্পত্তি তাদের সদ্য নবজাতক সন্তানকে নিতে দশমিনায় আসছেন। আলম মৃধা আক্ষেপ করে বলেন, সরকার যদি আমাকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেন, তা হলে আমি আমার সন্তানকে বিক্রি করতে চাই না।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।