রবিউল ইসলাম রবি ॥ পটুয়াখালীতে হিন্দু পরিবারের ২০ কোটি টাকার জমি দখল করে পজিশন বিক্রি করায় বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী (জমিদার বাড়ি) গ্রামের মৃত গৌতম মুখার্জীর স্ত্রী ববিতা মুখার্জী। আদালত সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থা আদেশ প্রদান করলেও বিবাদীরা তা অমান্য করে জমিতে ইট বালু ফেলে কাঠ ও টিনের স্টল নির্মাণ করে অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করছেন। কোন প্রতিকার না পেয়ে আবেদনকারী ওয়ারিশ স্বত্ব ও দখল বুঝিয়ে পাওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টার বরাবর লিখিত অভিযোগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুলিপি প্রেরণ করেছেন। ববিতা মুখার্জী বরিশাল নগরীর ১৮ নং ওয়ার্ড কালীবাড়ী রোডস্থ এলাকার বাসিন্দা মৃত জনার্ধণ চক্রবর্তীর মেয়ে।
অভিযুক্তরা হলেন- পটুয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ, পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ আহাম্মেদ, পটুয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এস.আই কামরুল, পটুয়াখালী সদর থানা রোড এলাকার বাসিন্দা মো. হেমায়েত হোসেন খন্দকারের দুই ছেলে শাখাওয়াত হোসেন খন্দকার ও তরিকুল হাসান এবং মৃত মোহাম্মদ মজলিসের ছেলে সুলতান মজলিশ সহ অজ্ঞাত ৪০/ ৫০ জন স্থানীয় ভূমিদস্যু।
পটুয়াখালী রেকর্ড রুম কর্তৃক সার্চ দিয়ে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- পটুয়াখালী থানার পটুয়াখালী মৌজার জেল নং ৩৮, হাল দাগ ৫০৪৬, জমির পরিমাণ ১ একর ২৭ শতাংশ। এর হালএসএ ১ নং খতিয়ানের হিস্যা আট আনা অংশে ৬৩.৫০ শতাংশ বকরি এসএ ১৮০৭, ১৮১১ নং খতিয়ানের দাগ নং ৫০৪৬ এবং হিস্যা আট আনার অংশে ৬৩.৫০ শতাংশ জমি মালিকানা জমি। যার রেকর্ড রয়েছে রাজেশ্বর রায় চৌধুরী এর নামে। লোকান্তরে ক্রমিক ওয়ারিশ সূত্রে এই ৬৩.৫০ শতাংশ জমির মালিক দখলদার প্রীতম মুখার্জী, অপু মুখার্জী ও তপু মুখার্জী। তাদের পিতা মাতা হলেন মৃত গৌতম মুখার্জী ও ববিতা মুখার্জী।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি গৌতম মুখার্জী নাবালক ওই তিন সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে ববিতা মুখার্জী ৬৩.৫০ শতাংশ জমি সহ অন্যান্য মৌজা মিলিয়ে মোট ১২৩ একর ০.২৫০ শতাংশ জমির অনুকূলে বরিশাল সহকারী জজ আদালতে বাদী হয়ে সম্পত্তির গার্ডিয়ানশিপ ক্ষমতা পাওয়ার জন্য একটি মোকাদ্দমা (নং-১৪২/১৪) দায়ের করেন। আদালত থেকে ২০১৫ সালের ৯ মার্চ ববিতা মুখার্জী গার্ডিয়ানশিপ সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত হয়। ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট একই আদালতে গার্ডিয়ানশিপ ক্ষমতার অনুকূলে সম্পত্তি বিক্রির পারমিশন মোকাদ্দমা (নং-২৭/১৫) দায়ের করলে বিচারক তাকে সম্পত্তি বিক্রির অনুমতি প্রদান করেন।
রেকর্ড রুমের সার্চ এর প্রাপ্ত তথ্যমতে, এক দাগে ওই ১ একর ২৭ শতাংশ জমির মধ্যে ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। এক দাগে সম্পত্তি থাকায় ববিতা মুখার্জী পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর জমি বণ্টনের আবেদন করলে সমাধান তো দূরের কথা সমাধানের আশ্বাস পায়নি বলে জানান ববিতা মুখার্জী।
এমন পরিস্থিতিতে ববিতা মুখার্জী সহ তার সন্তানরা বাদী হয়ে পটুয়াখালী সরকারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসি ও পটুয়াখালীর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বিবাদি করে আদালতে একটি জমির বণ্টন মোকাদ্দমা মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট পটুয়াখালী যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে এ মামলা (১৮৮/১৯) দায়ের হয়। বর্তমানে মামলাটি বদলি হয়ে দে: মো: নং- (১/২২) ৩য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
উক্ত মোকদ্দমায় আদালতের বিচারক বিবাদীদের বিরোধীয় জমি নিয়ে দোতরফা শুনানি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা নির্দেশ দেন। যাহা বহাল ও বলবৎ আছে। কিন্তু বিবাদীরা বিচারকের আদেশ জেনে শুনে অমান্য করে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর অভিযুক্ত এসআই কামরুল কে শেল্টার দিয়ে বিরোধীয় জমিতে অনুপ্রবেশের আদেশ দিয়ে ইট, বালু ভরে প্রায় ৫০টি কাঠ ও টিনের স্টল নির্মাণ করে কিছু সংখ্যক স্থানীয়কে দিয়ে অগ্রিম অর্থ আদায় করছে। আবেদনকারী ও তার সন্তানরা বাধা দিলে সম্পত্তি জবরদখলকারীরা তাদের তাড়িয়ে দেয়।
আবেদনকারী ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে অসহায় হিন্দু পরিবারের ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা দোকান ঘরগুলো অপসারণ করার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে জমির দখল বুঝািয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছি। তবে এ ঘটনার সাথে ডিসি অফিসের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমার জানা মতে ডিসি অফিসে ঘটনার সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কেউ আবেদনও করেনি।
পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার জাহিদ মুঠোফোন বলেন, ঘটনার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
অভিযুক্ত এসআই কামরুলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে প্রথমে তিনি গুরুত্ব সহকারে শুনলেও ঘটনার বর্ণণা শুনে জানান তিনি মসজিদে রয়েছেন।
স্থানীয় মো. হেমায়েত হোসেন খন্দকারের দুই ছেলে শাখাওয়াত হোসেন খন্দকার ও তরিকুল হাসান উক্ত জমিতে থাকা স্থাপনা কিভাবে পেয়েছে মুঠোফোনে একাধিবার কল দিলেও ধরেননি।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com