নেপালী মেয়ের বাংলাদেশে সুখে সংসার

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

প্রেমের টানে নেপাল থেকে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন সানজু কুমারী খাত্রী। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি নেপালী মেয়ে। বাংলা ভাষায় কথা বলছেন। আরবিতে কোরআন পড়তেও জানেন। বাঙালি নারীদের মতো চলাফেরা তার। ইতোমধ্যে তার কোল আলো করে এসেছে কন্যা সন্তান। স্বামী প্রবাসে থাকায় শ্বশুর, শাশুড়ির খেদমতের পাশাপাশি মেয়েকে নিয়ে তার সময় কাটছে।

২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি সানজু টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন আলীর মালয়েশিয়া প্রবাসী ছেলে নাজমুল ইসলামের কাছে আসেন। ওই বাড়িতে গিয়ে এ সব বিষয়ে সানজুর সঙ্গে কথা হয়।

সানজু নেপালের কাঠমান্ডু শহরের বাসিন্দা দমর বাহাদুর খাত্রীর মেয়ে। তিন বোনের মধ্যে সানজু (২৩) দ্বিতীয়। তবে সানজুর বর্তমান নাম খাদিজা আক্তার।

মালয়েশিয়ায় একই কোম্পানিতে কাজ করার সুবাধে সানজুর সঙ্গে বাংলাদেশি যুবক নাজমুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় তিন বছর প্রেমের সম্পর্কের পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে মালয়েশিয়া থেকে সানজু তার দেশে ফিরে যান। এর এক মাস পর নাজমুলও দেশে ফিরে আসেন। এরপর নাজমুল তার এক আত্মীয়কে নিয়ে নেপালে সানজুর বাড়িতে যান। সেখানে সানজুর পরিবারকে রাজি করিয়ে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি সানজুকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসেন। এরপর টাঙ্গাইলে আদালতের মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজসহ স্থানীয় নিকাহ রেজিস্ট্রার দিয়ে বিয়ে করেন। তখন সানজু হিন্দু ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর তার নাম রাখা হয় খাদিজা আক্তার।

বিয়ের কিছুদিন পর সানজু তার দেশ নেপালে ফিরে যান। সেখানে কিছু দিন থাকার পর স্বামীর কাছে বাংলাদেশে চলে আসেন। কিছু দিন সংসার করার পর নাজমুল মা-বাবার কাছে স্ত্রী সানজুকে রেখে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। এরপর থেকে শ্বশুর-শাশুড়ি ও এক ননদের সঙ্গে বসবাস করছেন তিনি। দুই বছর আগে সানজু কন্যার জন্ম দিয়েছেন।

কন্যা সন্তানের মা হতে পেরে খুশি সানজু। বাঙালির মতো চলাফেরা ও পোশাক পরিধান করছেন তিনি। এখন পুরোপুরি বাংলা বলতে ও আরবিতে কোরআন শরীফ পড়তে পারেন। শ্বশুর-শাশুড়ি ও পরিবারের অন্যদের জন্য খাবার তৈরিসহ সংসারের সব কাজ করছেন তিনি। কৌতুহলী হয়ে এখনও অনেকে তাকে দেখতে আসছেন। দেখতে আসায় সানজুও আনন্দিত।

সানজু কুমারী খাত্রী বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সবাই আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। আমিও এখন বাংলা বলতে শিখেছি। মেয়ের পেছনে দিনের বেশি সময় যাচ্ছে। অনেক ভালো আছি। স্বামী বিদেশে রয়েছে। খুব দ্রুতই দেশে চলে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেপালে আমার মা ও দুই বোনসহ আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। তাদের সঙ্গে ভিডিও কলে নিয়মিত কথা হয়। আমার পরিবারের সম্মতি বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেছি।’

সানজুর শ্বশুর হুমায়ুন আলী বলেন, ‘নেপালী মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে পেয়ে আমি আনন্দিত। নেপালে বৌমার মা ও দুই বোন রয়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। বৌমাও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। সব কিছু স্বাভাবিক চলছে।’

সানজুর স্বামী নাজমুল ইসলাম মালয়েশিয়া থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘সানজুকে স্ত্রী হিসেবে পেয়ে আমি খুশি। সানজু বাঙালি মেয়ের মতো সংসার করছে। আমরা অনেক ভালো আছি।’

স্থানীয়রা জানান, শ্বশুর-শাশুড়ি সানজুকে সব কিছু শিখিয়ে নিয়েছেন। তারা মিলে-মিশে সংসার করছেন। শ্বশুর-শাশুড়ি নিজের মেয়ের মতো তাকে দেখেন।