নেইমারের উপহার দেওয়া জাদুকরি মুহূর্তগুলো সবার চোখের সামনে ভাসবে। কথা হবে উইলিয়ানের গতি আর ফিলিপে কুতিনহোর স্কিল নিয়ে। কিন্তু আড়ালে থেকে যাওয়াই যেন নিয়তি সিলভা-ফাগনারদের! ব্রাজিল দলের রক্ষণের কথা কে কবে মনে রেখেছে!
তবে এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গল্পটা বোধ হয় একটু আলাদা। নেইমার-কুতিনহোদের পাশাপাশি কিছু আলো এসে পড়ছে মিরান্দা-লুইসদের ওপরও। এ রকম একটা আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে, ব্রাজিল এবার বিশ্বকাপ জিতলে জমাট রক্ষণের কারণেই জিতবে।
থিয়াগো সিলভার নেতৃত্বে ফাগনার-লুইস-মিরান্দারা সত্যি দুর্ভেদ্য এক দেয়াল গড়ে তুলেছেন প্রতিপক্ষ দলগুলোর জন্য। ব্রাজিলের জমাট রক্ষণ ভেঙে মাত্র একবারই বল জালে ঢুকেছে, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে। রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ব্রাজিল আর উরুগুয়েই গোল খেয়েছে সবচেয়ে কম (একটি করে)।
তা জমাট রক্ষণের প্রেরণা ব্রাজিল পেল কোথা থেকে? রক্ষণের চিরায়ত মায়েস্ত্রো ইতালিয়ানরা এবারের বিশ্বকাপে নেই, কিন্তু ব্রাজিলের প্রেরণা তারাই। আরও নির্দিষ্ট করে জুভেন্টাসের রক্ষণ থেকেই প্রেরণা খুঁজে নিয়েছেন সিলভা-মিরান্দারা। ব্রাজিলের সহকারী কোচ সিলভিনেহা তো বলেছেনও, ‘ইতালিতে সর্বশেষ সাতবারের চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস। এই সাতবারের মধ্যে মাত্র একবারই ওদের রক্ষণ সেরা ছিল না।’
যেকোনো বিশ্বকাপেই গোলদাতারা থাকেন আলোচনায়। কিন্তু বিশ্বকাপ জেতে সেই দলগুলো, যাদের রক্ষণ সেরা। ২০১৪ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির কথাই ধরুন। সাত ম্যাচে তারা গোল খেয়েছে চারটি। ২০১০ বিশ্বকাপে স্পেন এবং ২০০৬ বিশ্বকাপে ইতালি চ্যাম্পিয়নই হয়েছে তাদের রক্ষণদৃঢ়তায়। গোল খেয়েছে মাত্র দুটি করে।
১৯৮২ আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সে কী আক্রমণভাগ! জিকো-সক্রেটিসরা সাম্বার ছন্দে মাতিয়ে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপ। কিন্তু শিরোপা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারল কই ব্রাজিল! আবার ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপের দিকে তাকান। ব্রাজিলের আক্রমণেও প্রতিভা তখনো ছিল। কিন্তু নিজেদের ইতিহাসে চতুর্থ ও পঞ্চম শিরোপা জেতায় বড় ভূমিকা ছিল ইস্পাতকঠিন রক্ষণের। ২০০২ বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে শুধু ইংল্যান্ড গোল করতে পেরেছিল ব্রাজিলের বিপক্ষে।
তিতের ব্রাজিলের রক্ষণভাগ যথেষ্ট ধারাবাহিক। সর্বশেষ ২৯ ম্যাচে ব্রাজিল রক্ষণ গোল খেয়েছে মাত্র আটটি। এই বিশ্বকাপেও আর খেতে চায় না তিতের রক্ষণভাগ। সে জন্য চার ডিফেন্ডার ও একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পাশাপাশি বাকিদেরও ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন সিলভা, ‘আর কোনো গোল না খাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আমরা একটি বিষয়ে খুব জোর দিচ্ছি—রক্ষণের কাজটা আক্রমণভাগ থেকেই শুরু করতে। আমাদের অর্ধে বল এলে তখন বিপদমুক্ত করা সহজ হয়ে যায়।’
শেষ ষোলোর প্রথমার্ধে ব্রাজিলের রক্ষণের বেশ পরীক্ষা নিয়েছে মেক্সিকো। দ্বিতীয়ার্ধে তিতে দলকে মাঠে নামালেন ছক বদলে দিয়ে, ৪-৪-২। এরপর আর মেক্সিকো খুব বেশি গোলের পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারল না। চোটের কারণে বিশ্বকাপের আগেই রাইটব্যাক দানি আলভেজ ছিটকে পড়েছেন। ফাগনার দায়িত্বটা সামলাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনেকের মনেই শঙ্কা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তিনি হিরভিং লোজানোকে অসাধারণ একটি ট্যাকল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৈরি হয়েই বিশ্বকাপে এসেছেন। যোগ করা সময়েও লোজানো একবার বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়েছিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই তাঁকে ঘিরে ধরেছেন ব্রাজিলের চার ডিফেন্ডার।
জমাট রক্ষণের ফাঁক গলে বল খুব একটা ব্রাজিলের পোস্টের দিকে যেতে দেখা যায়নি। যে কয়বার গেছে, পোস্টের নিচে থাকা আলিসন বেকার সামলেছেন দক্ষ হাতে। যাঁকে এরই মধ্যে ‘গোলরক্ষকদের পেলে’ আখ্যা দিয়েছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল গোলরক্ষক ক্লদিও তাফারেল। দুর্দান্ত এই রক্ষণ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখতেই পারে ব্রাজিল।