কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ধাওয়ায় নীলকমল নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় ডুবে মারা যাওয়া দুই ভাই-বোনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাত ৮টার দিকে কাশীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তে আন্তর্জাতিক পিলার ৯৪২-এর সাব-পিলার ৮এস-এর পাশে বিএসএফ-বিজিবি পতাকা বৈঠক হয়। এ বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ ফেরত দেয় বিএসএফ।
পরে বিজিবি দুই শিশুর পরিবারকে মরদেহ হস্তান্তর করে। রাতেই পারভীনা খাতুন ও শাকিবুল হাসান নামে ওই দুই শিশুর মরদেহ দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
পারভীনা খাতুন ও শাকিবুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
মরদেহ হস্তান্তরের সময় বিএসএফের পক্ষে ১৯২ ব্যাটালিয়নের সেওটি-১, সেওটি-২ ক্যাম্পের বিএসএফ, সাহেবগঞ্জ থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিজিবির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার ফরিদ, অনন্তপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ আরফিন, পুলিশের পক্ষে এএসপি সুমন রেজা, ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান, ওসি তদন্ত সারওয়ার পারভেজ, নাগেশ্বরীর নেওয়াশী ইউনিয়নের সদস্য আজিজুল ও মেছের আলী।
লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার ফরিদ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে রোববার (৩ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে ফুলবাড়ীর ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৪৩-এর ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে নীলকমল নদীতে শিশু দুটির ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে ১৯২ ব্যাটালিয়ন সেওটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ।
শুক্রবার (১ জুলাই) রাতে ভারতীয় কয়েকজন দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারত থেকে নীলকমল নদী সাঁতরে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে ফেরার সময় স্রোতের টানে মা ছামিনা বেগমের (৩০) হাত ফসকে নিখোঁজ হয় শিশু পারভীনা খাতুন (৮) ও শাকিবুল হাসান (৪)। তাদের বাবা রহিজ উদ্দিনের (৩৫) বাড়ি পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের মধ্যসুখাতী গ্রামে।
নিহত শিশুর চাচা নেওয়াশী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিজুল জানান, তার ভাই রহিজ উদ্দিন ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে অবৈধভাবে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে যান। কাজ করেন একটি ইটভাটায়। সেদেশেই ওই দুই শিশুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
রহিজ উদ্দিন জানান, সর্বশেষ হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুরের হাসিহেসা ইটভাটায় কাজ শেষে তারা গত শুক্রবার বাড়ি ফিরছিলেন। তাদের কাছে বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় দালালদের সঙ্গে ২২ হাজার রুপিতে চুক্তি করেন। কিন্তু দালালরা তাদের কাছে ৪০ হাজার রুপি নেন। গত শুক্রবার রাতে ভারতীয় দালাল সিরাজুল ইসলাম, নয়ন, ময়না মিয়াসহ আরও কয়েকজন তাদেরকে কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার সেউটি-১ সীমান্তে এনে অন্য আরও ২০/২৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে একটি বাড়িতে রাখেন।
তিনি আরও জানান, রাত সাড়ে ৯টায় পাচারকারী দালালরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদেরকে নীলকমল নদীর পাড়ে এনে নো-ম্যানস ল্যান্ডে দাঁড় করিয়ে রাখে। তাদেরকে নদীতে সাঁতার কেটে দেশে ফিরতে বলেন। এসময় তাদের কথাবার্তার শব্দ শুনে ভারতীয় সেওটি-১ ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে দুই সন্তানকে নিয়ে নদীতে লাফিয়ে পড়েন তারা। ভয়ে অন্ধকারে তীব্র স্রোতের টানে ঠিকমতো সাঁতার কাটতে পারছিলেন না তারা। ভেসে যাচ্ছিলেন ভাটিতে। একপর্যায়ে স্ত্রী ছামিনার হাত ফসকে স্রোতের টানে পানিতে ডুবে যায় তাদের দুই শিশুসন্তান। সেসময় অনেক খুঁজেও তাদের উদ্ধার করতে পারেননি তারা।
এদিকে, রোববার নদীতে ভেসে উঠে মরদেহ। শিশু দুটির ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে ১৯২ ব্যাটালিয়ন সেওটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফ ও সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ। এদিন শিশু দুটির পক্ষে বাংলাদেশি কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় তারা মরদেহ দুটি নিয়ে যায়। পরে ওইদিন মৃত সন্তানের মরদেহ ফেরত চেয়ে লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধীন কাশিপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার বরাবর একটি মানবিক আবেদন করেন দুই শিশুর বাবা রহিজ উদ্দিন।