একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বিরোধীদের নেতিবাচক রাজনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে পাঁচটি মাধ্যম ব্যবহার করছে দলটি। একই সঙ্গে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও প্রচারের মূল লক্ষ্য হলো দেশের তরুণ সমাজ। দলটির প্রচার উপ-কমিটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে দলটির গবেষণা উইং- সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। গবেষণা উইং সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রচারণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তরুণ সমাজের যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বিগত বছরগুলোতে সে সম্পর্কে কিছুটা চিড় ধরেছে। তরুণদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব কমানোই হবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণার মূল লক্ষ্য।
সিআরআই সূত্রে আরও জানা গেছে, তরুণদের আকৃষ্ট করতে এবারের প্রচারণায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তো থাকবেই সঙ্গে তরুণদের ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলনও মিলবে নির্বাচনী প্রচারণায়। এর ব্যাখ্যা দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের তরুণ সমাজের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে যদি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দূরত্ব তৈরি হয় সেক্ষেত্রে নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এটি চিন্তা করেই অর্থাৎ তরুণদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনাই হবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণার মূল লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, টেলিভিশন মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালনার মাধ্যমে ইতোমধ্যে জোর প্রচারণা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। কারণ দেশের অধিকাংশ তরুণই এই মাধ্যমে বেশি আকৃষ্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা বেশি সময় ব্যয় করেন। এ কারণে এ মাধ্যমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম যশোরে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আসছে নির্বাচনে সাইবার যুদ্ধ হবে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি দলের কর্মী-সমর্থকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সক্রিয় হতে পরামর্শ দেন।
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘তারা (প্রতিপক্ষ) যদি মিথ্যা একটি লেখে, আপনার দশটি জবাব লিখুন। আপনারা কেন পিছিয়ে থাকবেন? আগামী নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংঘাতিক লড়াই হবে। আপনাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
সরকারি হিসাব অনুযায়ী (৩১ জানুয়ারি ২০১৮), দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ১০৫ আর নারী ভোটার পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিলেন নয় কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন। ২০০৮ সালে ছিলেন আট কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার। অর্থাৎ গত ১০ বছরে তরুণ ভোটার বেড়েছে দুই কোটি ২৫ লাখ। আগামী নির্বাচনে এরাই জয়-পরাজয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে নবীন ভোটার বেশি। এই নবীন ভোটাররা বিএনপি-জামায়াতের অপকর্ম সম্পর্কে জানেন না। এই বিষয়গুলো নবীনদের কাছে পৌঁছাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সিআরআই সূত্র জানায়, দেশের তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সরাসরি প্রচারণার কাজটি তত্ত্বাবধান করবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর জন্য বিভিন্ন কনটেন্ট সিআরআইয়ের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে সেটি শুরু করেছে সিআরআই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির প্রচার উপ-কমিটির এক নেতা জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধানে একটি প্রচার উপ-কমিটি ও একটি মিডিয়া উপ-কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রচার উপ-কমিটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভিন্নধর্মী প্রচারণার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার জন্য পাঁচটি মাধ্যম ব্যবহার করছি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিরোধীদের নেতিবাচক রাজনৈতিক দিকগুলো সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে।’
দলটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন বলেন, ‘প্রচারণার জন্য সব ধরনের মাধ্যমই আমরা ব্যবহার করবো। গত ১০ বছরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং আমাদের অর্জনগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে। পাশাপাশি তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ মাধ্যমে যে কনটেন্টগুলো আসবে সেগুলো অবশ্যই ব্যতিক্রমী হবে।’