নির্বাচন কমিশনারের কাছে বিসিসির ৭ মেয়র প্রার্থীর পাল্টাপালি অভিযোগ

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ১৬ জুলাই বিকালে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. মাহবুব তালুকদার। এসময় সাত মেয়র প্রার্থীই নির্বাচনের আচরণবিধি লংঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগও তোলেন তারা। প্রার্থীদের অভিযোগ এবং বক্তব্য শুনে তাৎক্ষনিক ভাবে প্রার্থীদের প্রশ্নের উত্তর এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন নির্বাচন কমিশনার মো. মাহবুব তালুকদার।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ’র নাসিমাজ্জামান মেহেদী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার প্রথম অংশে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ বক্তব্য এবং অভিযোগ শোনেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

প্রার্থীর মধ্যে থেকে প্রথম বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর ‘মই’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। বক্তৃতা কালে নির্বাচন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি লংঘনের ১৮টি পয়েন্ট রয়েছে। যার মধ্যে বরিশালে ১৫টি পয়েন্টই লংঘিত হচ্ছে। আচরণবিধিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্যেও প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থীর পোষ্টার আঠা দিয়ে দেয়ালে লাগানো হচ্ছে। প্রার্থীদের রঙিন পোষ্টার ও ব্যানারও রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি বলেছেন কালো টাকা আর পেশি শক্তি দেখতে চাই না। কিন্তু বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এই দুটির ব্যবহারই বেশি হচ্ছে। ক্ষমতাসিন প্রার্থীর লোকেরা বস্তিতে গিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থক ও শ্রমিকদের হুমকি সহ বিভিন্ন ভাবে ভয়ভিতি দেখাচ্ছে। ভোট না দিলে তাদের বস্তিতে থেকে উৎখাত করা হবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টির প্রতি রিটার্নিং কর্মকর্তা কিংবা প্রশাসনের নজরদারী নেই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্শন করে এখনই কালোটাকা আর পেশি শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবীও জানান ডা. মনীষা চক্রবর্তী।

এর পর বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী ‘হরিন’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী বশির আহমেদ ঝুনু। এসময় তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বরিশালের মানুষ সন্ধিগ্ধ। ৩০ জুলাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কি হবে, কিভাবে হবে সেই প্রশ্ন ভোটারদের মধ্যে। বরিশালের মানুষ ভোট দিতে চায়। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষা নির্বাচনের আশা করছে। যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সে দিকটা দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে কমিউনিস্ট পার্টির ‘কাস্তে’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আশংকার শেষ নেই। এখানকার নির্বাচনও খুলনা ও গাজিপুর সিটি নির্বাচনের পথে যাবে কিনা তা আগে নিশ্চিত করুন। বরিশালের মানুষ শান্তিপূর্ন নির্বাচন চায়। বরিশালের নির্বাচনও যদি খুলনা ও গাজিপুরের মতই হয় তাহলে বরিশাল থেকেই সেই দেশব্যাপী প্রতীবাদের ঝড় তোলা হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র ‘হাতপাখা’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব বলেন, আমরা শান্তিপূর্ন নির্বাচন যাই। ৩০ জুলাই ভোটারা যাতে কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, আজ বরিশালে প্রার্থীদের নিয়ে যে সভাটি আপনারা করছেন, খুলনা ও গাজিপুরেও একই ভাবে সভা করেছিলেন কিনা। আর করে থাকলে তার পরেও সেখানে কেন ভোট নিয়ে অনিময় হল। তাই শুধু সভা আর আশ্বাসের বানী দিয়ে নয়, বরং এর বাস্তব প্রতিফলনের দাবী জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির ‘লাঙল’ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন তাপস নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যদি মনে করেন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। সেখানে কোন অনিময় হয়নি। তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে বলতে হবে সেখানে যা হয়েছে তা আপনারাই করেছেন। আর যদি মনে করেন সেখানের ভোট সুষ্ঠু হয়নি, তবে বরিশালের ভোট কিভাবে সুষ্ঠু করবেন সে বিষয়ে আপনাদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। বরিশালের জণগন ভোট নিয়ে মারামারি বা ব্যালট ছিনতাই করবে না। তারা শান্ত। জণগন ভোট দিতে যাবে কিন্তু তাদের কোন বাঁধা এবং প্রশ্ন করা হবে না। সেই ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, বরিশালে আমরা এমন কোন কর্মকান্ড করব না যাতে নির্বাচনের স্বচ্ছাতা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। আমি নির্বাচনের প্রতিটি সভা এবং উঠান বৈঠকে গিয়ে ভোটারদের বলছি ৩০ জুলাই কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে। কোন ধরনের আশংকার মধ্যে না থেকে আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে দেখে সুনে ভোট দিবেন।

সাদিক আবদুল্লাহ অন্যান্য প্রার্থীদের প্রতি প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার আত্মিয়। আর এটাই কি আমার দোষ। আমি বরিশালের সন্তান। নির্বাচন আমার সাংবিধানিক অধিকার। বরিশাল আওয়ামী লীগের তৃনমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দাবী অনুযায়ী আওয়ামী লীগ আমাকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। আমি মাঝি হয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আপনারা মিথ্যাচার বন্ধ করুন। আমি মেয়র হলে বস্তির মানুষ উচ্ছেদ হচে, অটোরিক্সা বন্ধ করে দেয়া হবে এমন গুঞ্জন ছাড়াবেন না। পাশাপাশি অপপ্রচার বন্ধের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমি বরিশালে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে দেখিয়ে দিতে চাই। বরিশালের শিক্ষিত ও তরুন-যুব সমাজ আমাকে অবশ্যই ভোট দিবেন এটা আমার বিশ্বাস।
সবার শেষে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব এ্যাড. মজিবর রহমান সরওয়ার।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের পর থেকেই মানুষের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। তার মধ্যে খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন মানুষকে আরো হতাশ করেছে। আমরা চাই লেভেল প্লেইং ফিল্ড। যদি লেভেল প্লেইং ফিল্ড না করেন তাহলে কোন কাজ হবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব লোক রয়েছে। তাদের দিয়ে আপনারা সরেজমিনে মনিটরিং করালে তাহলে প্রার্থীদের আর অভিযোগ দেয়ার প্রয়োজন হত না। আমরা আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ করেছি। কিন্তু আপনারা ব্যবস্থা না নিয়ে আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন। তাছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েন হলে জগণ ভোটের বিষয়ে আরো উৎসাহিত হত জানিয়ে মজিবর রহমান সরওয়ার আগামী ২৯ জুলাই’র পরিবর্তে ৩০ জুলাই নির্বাচন শুরুর পূর্বে খুব ভোরে ব্যালট বক্স ও ব্যালট পেপার কেন্দ্রে প্রেরনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা যায় কিনা সে বিষয়টি দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ জানান।