নিম্নমানের কাগজে ছাপা হচ্ছে শিশুদের বই

:
: ৭ years ago

নিম্নমানের কাগজে ছাপা হচ্ছে মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কড়া মনিটরিং না থাকায় নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপানোর সুযোগ নেয় অসাধু চক্র। তবে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা।

তিনি বলেন, ইন্সপেকশন টিম নিয়োগ দেয়া হয়েছে নিম্নমানের কাগজ ও ছাপা ধরার জন্য। এখানে কারা প্রভাবশালী সেটা দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। এরপর যদি ইন্সপেকশন টিম এ ধরনের গর্হিত কাজে লিপ্ত হয় অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ উঠেছে, এনসিটিবির কর্মচারী ইউনিয়নের কিছু নেতা সিন্ডিকেট করে নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক তৈরি করছে। এছাড়া কয়েকটি বড় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজ কিনে গুদামজাত করেছে। নভেম্বরের শেষ দিকে এসব কাগজ দিয়ে বই ছাপানো শুরু করবে। এ জন্য ইতোমধ্যে ইন্সপেকশন টিমকে ম্যানেজ করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, বাজারে নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করার শীর্ষে আছে আল নূর পেপার মিলস। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিগত বছরে নিম্নমানের কাগজ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে এনসিটিবিতে।

এছাড়া গাজীপুর পেপার মিলস, মক্কা পেপার মিলস, পূর্বাচল পেপার মিলস, হাক্কানী পেপার মিলস, মোস্তফা এবং ইকো পেপার মিলস নিম্নমানের কাগজ বাজারের সরবরাহ করছে। এসব পেপার মিলস বইয়ের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে বাজার দরের চেয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কম মূল্যে কাগজ সরবরাহ করার অফার দিচ্ছে। এতে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের এ অফার লুফে নিচ্ছে।

পরবর্তীতে এ কাগজ দিয়ে বইও ছাপানো হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাগজ খুবই নিম্নমানের। অনেকেই এ কাগজকে নিউজপ্রিন্ট বলে জানেন। এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত নষ্ট কাগজ রিসাইক্লিং করে ফের কাগজ উৎপাদন করে।

অভিযোগ রয়েছে, দরপত্রের শর্তানুযায়ী ৮০ গ্রাম কাগজে বই ছাপার কথা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কাগজের মান সর্বোচ্চ ৫৫ থেকে ৬০ গ্রাম। এনসিটিবির কর্মচারী ইউনিয়নের কতিপর নেতা মাধ্যমিক স্তরের ইন্সপেকশন টিমকে ম্যানেজ করে এসব কাগজে বই ছাপাচ্ছে।

এর সঙ্গে যুক্ত ক্যাপিটাল, মডেল, এস আর, এআরটিসহ কয়েকটি প্রেস। এসব প্রেসের সঙ্গে কয়েকজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও তাদের আত্মীয়রা জড়িত বলে জানা গেছে। প্রভাবশালী হওয়ার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে বলে এনসিটিবি।

জানা গেছে, সম্প্রতি মানিকগঞ্জের এস আর প্রিন্টার্স নিম্নমানের ৬০টন কাগজ আটকে দিয়েছে কন্টিনেন্টাল বিডি ইন্সপেকশন টিম। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব নিম্নমানের কাগজ প্রেস থেকে সরিয়ে নেয়ার সময় দেন।

আল্টিমেটাম অনুযায়ী ওই প্রেস সেই কাগজ সরিয়ে নেন। একই অভিযোগ রয়েছে দুলাল সরকারের মালিকাধীন বলাকা প্রিন্টার্সের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের কাগজ দিয়ে বই ছাপার সময় তিনবার ওই প্রতিষ্ঠানের কাগজ আটকে দেয় কন্টিনেন্টাল বিডি।

তবে তাদেরকে কাগজ সরানোর কোন চিঠি দেয়া হয়নি। এছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাগজ গুদামজাত করছে। নভেম্বরের শেষে দিকে বই ছাপার ছাপ বাড়তে থাকবে তখন এসব কাগজ দিয়ে ছাপা শূরু করবে তারা।

এ ব্যাপারে কন্টিনেন্টাল বিডি প্রকল্পের পরিচালক শেখ বেলাল হোসেন বলেন, নিম্নমানের কাগজের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান শক্ত। প্রথমদিকেই কাগজ ক্লিয়ারেন্সে কঠোরতায় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্রে শর্ত মোতাবেক কাগজ দিয়ে বই ছাপাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমি নিজেই রাত ১১টা পর্যন্ত প্রেস থেকে মনিটরিং করছি। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুইজন তিনজন লোক সার্বক্ষণিক বসিয়ে রেখেছি। মাধ্যমিক পর্যায়ের বই নিম্নমানের কাগজ দিয়ে ছাপানোর কোন সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।