নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া-কাছিয়ারপাড় সন্দ্বীপ নৌ-ঘাটটি  (ফেরিঘাট) রাজার ঘাট নামে পরিচিত। কয়েক বছর আগে এই ঘাটটিকে বিচ এলাকা ঘোষণা করেন আবুল কাসেম রাজা।

নারায়নগঞ্জ থেকে বৃহস্পতিবার দুপরে এই সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে এসে গোসল করতে নেমে নিঁখোজ হয় দুই শিক্ষার্থী। এর ২৪ ঘণ্টা পর শুক্রবার বিকেলে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতদের একজন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্বিরগঞ্জ উপজেলার বাগমারা গ্রামের মো. খোকনের ছেলে কলেজছাত্র মো. ইমন (১৯)। সে সিদ্ধিরগঞ্জ রৌশনআরা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। অপরজন হলো তার খালাতো ভাই মো. রাজু (১৫)। সে এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থী। সে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার কাশীমপুর গ্রামের মো. মহসিনের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে আসা ৯ ছাত্র বাঁশবাড়িয়া উপকূলে বেড়াতে এসে  সাগরে গোসল করতে নামে। কিন্তু সে সময় সাগরে ভাটার প্রবল টান থাকায় তাদের মদ্যে ৮ জনই ভেসে যেতে থাকে। এ সময় তিনজন কোনোক্রমে কূলে এসে অন্যান্য পর্যটকদের সহযোগিতায় ভেসে যেতে থাকা আরও ৩ জনকে উদ্ধার করলেও ইমন ও রাজু ভেসে যায়।

খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীর সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের খবর দিলে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস, থানার কর্মকর্তারা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) অন্যান্যরা সেখানে ছুটে যান।  সীতাকুণ্ড ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ছয়জন ডুবুরি উদ্ধার কাজ শুরু করেন।

পরে না পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শুক্রবার বেলা ২ টার দিকে কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আবার উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে বেলা ৩ টার দিকে রাজু ও বিকেল ৫ টার দিকে ইমনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ দিকে শুক্রবার বিকেলে সাগর থেকে উদ্ধার করে ইমন ও রাজুর মরদেহ বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে নিয়ে আসা হলে তাদের বাবা-মাসহ স্বজনদের আহজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

নিহতদের বন্ধু আরিফ বলে, আমার নয় বন্ধু বৃহস্পতিবার সকালে সীতাকুণ্ডে বেড়াতে আসি। ওইদিন সকালে চন্দ্রনাথ মন্দির ও ইকোপার্ক দেখে বিকেলে বাঁশবাড়িয়া সমুত্র সৈকতে আসি। আমি আমার অপর বন্ধুদের কাপড় ও মোবাইল নিয়ে সৈকতের পাড়ে ছিলাম। আট বন্ধু সৈকতে গোসল করতে নামে।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, যে ঘাটে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে ঘাট পরিচালনা করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী এমএ কাসেম (রাজা)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এখানে সারাবছর কমবেশি দর্শনার্থীর আগমন হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ী রাজা কাসেম এখানে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করে দর্শনার্থীদের সাগরে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন এবং টাকার বিনিময়ে (টিকিট) জেটিতে বেড়ানোর সুযোগ করে দেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভাটার মধ্যে সৈকতে গোসল করতে নেমে তারা ভাটার টানে ভেসে যায়। পরে  শুক্রবার বিকেলে কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে।

ইউএনও তারিকুল আলম বলেন, ঘটনার পর জেলা প্রশাসক বাঁশবাড়িয়া ঘাটে পর্যটকদের পানিতে নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন।

ঘাটের ইজারাদার এমএ কাসেম রাজা বলেন, প্রভাবশালী একটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে সৈকতে ড্রেজিং করে মাঠি উত্তোলনের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা জেলা পরিষদের ঘাটটি দখল করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি লিখিতভাবে সরকারি সকল দফতরে বিষয়টি জানিয়েছি।

ইমনের বাবা মোহাম্মদ খোকন বলেন, ছেলে যখন মোবাইলে সীতাকুণ্ড আসার কথা বলছিলো, তখন আমি তাকে বারণ করেছি। কিন্তু ছেলে বলছিলো  ‘এবারই যাবো, আর কখনো যাবো না’। কিন্তু ছেলে যে একেবারে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তা কখনো কল্পনাও করিনি।