না ফেরার দেশে চলে গেলেন অভিনেত্রী বেলা বোস

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

টেলিফোনের ওপারে নয়, লাইট-ক্যামেরার সামনে থাকা বলিউড অভিনেত্রী বেলা বোস আর নেই। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীণ এই অভিনেত্রী। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, গত ২৫ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অভিনেত্রী। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন তিনি। ষাট ও সত্তরের দশকে বলিউডের পরিচিত মুখ ছিলেন বেলা বোস।

প্রায় ২০০টি হিন্দি এবং আঞ্চলিক সিনেমায় অভিনয় করেন বেলা বোস। ১৯৫০ থেকে ৮০-র দশকে বড় পর্দায় দাপিয়ে অভিনয় করেন এই অভিনেত্রী।

১৯৪৩ সালে ১৮ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন বেলা বোস। তার বাবা একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। ছোটবেলা থেকে মণিপুরী নৃত্যশৈলীর প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল তার। এরপর বিভিন্ন ঘরানায় নাচে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন তিনি। অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি বেলা বোস একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী এবং জাতীয় পর্যায়ের সাঁতারুও ছিলেন।

 

ছোটবেলায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে সপরিবারে মুম্বাই পাড়ি দেন বেলা বোস। এক পথ দুর্ঘটনায় বাবাকে হারান অভিনেত্রী। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বলিউডে পা রাখেন তিনি। পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য, সংসারের হাল ধরতে সিনেমায় গ্রুপ ড্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন। নাচের দক্ষতার কারণে চোখে পড়েন পরিচালক নরেশ সায়গলের। তিনি ‘ম্যায় নেশা মে হুঁ’ সিনেমায় বেলা বোসকে সোলো ড্যান্সার হিসেবে সুযোগ দেন। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। এই সিনেমায় নায়ক-নায়িকা ছিলেন রাজ কাপুর এবং মালা সিনহা।

কঠোর পরিশ্রমে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বলিউডে নিজের পায়ের নিচে জমি মজবুত করেন বেলা বোস। হয়ে ওঠেন হেলেন-আশা পারেখ-মোমতাজের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী। শাস্ত্রীয় নৃত্য থেকে বলিউডি নাচ—বেলা বোসের বিচরণক্ষেত্র ছিল অবাধ।

১৯৬৪ সালে চন্দ্র শেখর পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমা ‘চা চা চা’-তে হেলেনের পাশাপাশি অভিনয় করেন বেলা বোস ও অরুণা ইরানি। হেলেনের বড় বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বেলা। এই সিনেমার প্রায় প্রত্যেক দৃশ্যে নাচ রয়েছে।

 

নায়িকা হিসেবে বেলা বোসকে প্রথম দেখা গিয়েছিল ‘নাগিন অউর সাপেরা’ সিনেমায়। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমায় বেলার বিপরীতে নায়ক ছিলেন মনোহর দেশাই। এর পাশাপাশি তার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো- ‘বন্দিনী’, ‘প্রফেসর’, ‘আম্রপালী’, ‘সিআইডি ৯০৯’ ‘শিকার’, ‘জিনে কি রাহা’, ‘রকি মেরা নাম’, ‘প্রেমপত্র’, ‘জিদ্দি’, ‘চিত্রলেখা’, ‘পুনম কে রাত’, ‘বক্সার’, ‘অভিনেত্রী’ এবং ‘জয় সন্তোষী মা’।

ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি সময়ে অভিনেতা, পরিচালক আশিষ কুমারকে বিয়ে করেছিলেন বেলা বোস। দুই সন্তানের মা হওয়ার পরে অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেন তিনি। ২০১৩ সালে প্রয়াত হোন আশিষ কুমার। বেলা বোসের মেয়ে মঞ্জুশ্রী একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। ছেলে, অভিজিৎ একটি আর্থিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বলিউডে।