ইমন ইসলাম
নারী দিবস শুধু একটি দিনের উৎসব নয়, বরং এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নারী দিবস মানে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে একটি লড়াই। নারীদের অর্জনগুলো স্মরণ করার এবং এখনো নারীদের যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দেয় দিনটি।
নারীরা সমাজের সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে পূর্ণ সমতা অর্জনের জন্য এখনো অনেক পথ বাকি। তাই নারীদের ক্ষমতায়ন ও সমাজের সকল ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও সমাজের সকলের উচিত একসঙ্গে কাজ করা।
নারী দিবস উপলক্ষে নারীর চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর ভাবনা ও মতামত তুলে ধরা হলো-
মাকসুদা আক্তার
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নারীর বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট প্রকৃতিগত বৃদ্ধি ও বিকাশের তাড়না আছে এবং তা শারীরিক ও মানসিক উভয় বিকাশের জন্যই প্রয়োজন। বাইরের কোনো কিছুর প্রভাব বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে যেমন সহায়তা করতে পারে তেমন ব্যাহতও করে। নারীদের ক্ষেত্রে এ বিকাশ দীর্ঘকাল ধরে ব্যাহত হচ্ছে। পুরো সমাজব্যবস্থা নারীদের দেখে এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণে। মা, বোন, স্ত্রী কিংবা শাশুড়ি, দাদি হিসেবে পার করা জীবনের প্রতিটি ধাপে নারীকে পালন করতে হয় আলাদা ভূমিকা। তবে সবগুলো চরিত্রই শিক্ষালাভ করতে পারলে সমাজের জন্য হবে প্রোডাক্টিভ আর যদি তা না পারে তাহলে সমাজে বসেই তারা হয়ে ওঠে বোঝা। নারীও মানুষ, কোনো দেশের অর্ধেক মানুষকে পেছনে ফেলে দেশ এগোতে পারেনা। পশ্চিমা দেশগুলোকে লক্ষ্য করলেই আমরা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখতে পাবো। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই নারীকে এগিয়ে আনতে হবে। এজন্য পুরুষ এবং নারী উভয়েরই মানসিক চিন্তাচেতনার উৎকর্ষতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ প্রয়োজন।
মানসুরা ইয়াসমিন ইতি
শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
একটি দেশ রূপান্তরের জন্য একজন পুরুষের যেমন প্রয়োজন তেমনি একজন নারীরও ততোটাই প্রয়োজন। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি দেশ পরিচালনাও করছে নারীরা। কিন্তু এই পুরুষশাসিত সমাজে আবার তারা প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতিত, হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে একক ও সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হন মোট ৫৭৩ জন নারী, এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা ও আত্মহত্যার শিকার হয়েছেন আরও ৩৮ জন নারী। আমাদের সমাজে ধর্ষকের বিচার না করেই ধর্ষিতাকে দোষী হিসেবে দেখা হয়। এছাড়াও রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানিরও শিকার হচ্ছেন নারীরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি বলতে চাই, ‘জীবন যদি রংধনু হয়, তবে নারী তার রঙের বাহার, আর জীবনে যদি নামে আধার, তবে নারী হবে আশার আলো।’ এই ধারণা সামনে রেখে এবং সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে নারীরা এগিয়ে যাক দূর্বার গতিতে, অদম্য শক্তিতে ও সাহসে।
কাজী তানজিম ফারিয়া
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ নারীর অবদান স্বীকৃতি দেওয়ার দিন। বিশ্বব্যাপী এই দিন পালন করা হয় নারীদের অধিকার আদায় ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করার জন্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট থেকে দেখা যায় পূর্বের তুলনায় বর্তমানে নারীরা অনেক সচেতন। নিজের অধিকার ও ক্ষমতা আদায়ে তারা দৃঢ় তৎপর। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সীমা পেরিয়ে নারীরা দেশ-বিদেশের অনেক ক্ষেত্রে সফলভাবে ভূমিকা রাখছে। যদিও গ্রামাঞ্চলে এখনো নারীদের কিছুটা সংযত করে রাখা হয় তবুও সরকারের নানাবিধ প্রচেষ্টায় তারা ধীরে ধীরে আত্মসচেতন হচ্ছে যা আমাদের সমাজকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক হলেও নারীরা একপেশে আইনী সুবিধাভোগী। এরই ফলসরূপ সমান অধিকার আদায়ের নামে কতিপয় নারীসমাজ পুরুষজাতিকে অপদস্ত করছে যেটা কখনোই কাম্য নয়।
শামীমা
শিক্ষার্থী, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঘরে-বাইরে সর্বত্র কত যে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার গল্প চাপা পড়ে রয়, সে কথা অনেকেরই অজানা! একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও পথে-ঘাটে মানহানিকর ঘটনা দেখেও প্রতিবাদ না করতে পারাটা নীরবেই জানান দেয়,কতটা দুর্দশা আমাদের দেশের নারী সমাজের। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমার প্রত্যাশা এটাই, ‘যেন প্রতিটি নারী মানুষ হিসেবে যথোপযুক্ত সম্মান এবং মর্যাদা পায়। বিশ্বের বুকে নারীরা যেন স্ব-মহিমায় বাঁচার সুযোগ পায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ সকল জায়গায় ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী মানহানির ঘটনা বন্ধ হোক। অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিটি নারীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথ মসৃণ হোক। নারীর কোমল স্পর্শে আলোকিত হোক আমাদের ধরণী।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।