নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের সুপারিশ বিসিকের

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সুপারিশমালা প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিসিক থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ১৬ দফা সুপারিশমালার মধ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এ সুপারিশ করা হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ সুপারিশে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬-এর সংজ্ঞা অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। আর জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬-এ উল্লিখিত উচ্চ অগ্রাধিকার, অগ্রাধিকার, সেবা এবং কৃষিভিত্তিক কর্মকাণ্ড ও কৃষিপণ্য/খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের উদ্যোক্তাসহ অন্যান্য অপ্রচলিত খাতের উদ্যোক্তাদের বিবেচনায় আনা যেতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে।

ঋণ প্রদানে জামানতের বিষয়টি বিসিকের ওই সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের সহায়ক জামানতের পরিবর্তে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও গ্রুপ গ্যারান্টিকে জামানত হিসেবে নেয়া যেতে পারে। আর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জামানত ব্যতিরেকে সহজ শর্তে শুধু একটি ইউনিফর্ম আবেদনের মাধ্যমে এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদান করা যেতে পারে। অন্যদিকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানতবিহীন সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে বিসিক।

এছাড়া ঋণ প্রদানের জন্য একটি সহজবোধ্য গাইডলাইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে বিসিক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ছয় মাস বা এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ পাঁচ বছর মেয়াদে ঋণ প্রদান করা যেতে পারে। আর বিদ্যমান ঋণগ্রহীতা উদ্যোক্তাদের তাদের নিজ নিজ ব্যাংক থেকে বর্তমান ঋণ সুবিধার পাশাপাশি এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ প্রদান করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের আলোকে খাতভিত্তিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঋণ বিতরণের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বরে জারীকৃত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) অর্থায়নসংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলারের আলোকে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ ঋণের সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। আলোচ্য ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) অর্থায়নসংক্রান্ত মাস্টার সার্কুলারে উল্লিখিত স্মল এন্টারপ্রাইজ খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আলোকে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) অনুমোদনপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ঋণ বিতরণ, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের বিধিবিধানের মধ্যে থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিচ্ছে, তাদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মনে করছে বিসিক।

খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত শিল্প ইউনিটগুলো, লবণ চাষী এবং লবণ প্রক্রিয়াকরণ মিলগুলো, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো, জামদানি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো, মৌ-চাষী, হালকা প্রকৌশল শিল্পপ্রতিষ্ঠান, প্লাস্টিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মুদ্রণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সাব-কন্ট্রাক্টিং তালিকাভুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কৃষিভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং বিসিক কর্তৃক নিবন্ধিত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি লাঘবে বিসিক ও শিল্প মালিক সমিতির যৌথ সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণোদনা প্যাকেজ অনুযায়ী এসব শিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান করা যেতে পারে।

শিল্পনগরীর বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ বিতরণের বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, বিসিক শিল্পনগরী বহির্ভূত দেশের বিভিন্ন বিভাগ/জেলা/উপজেলায় স্থাপিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য জেলা প্রশাসন, বিসিক, নাসিব, অ্যাসোসিয়েশন/চেম্বারের যৌথ তালিকা ও সুপারিশের ভিত্তিতে উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে।

জেলাভিত্তিক ঋণ বিতরণের বিষয়েও সুপারিশ করেছে বিসিক। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিটি জেলার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের (সরকারি ও বেসরকারি) মধ্য থেকে একটি ব্যাংককে এসএমই লিড ব্যাংক হিসেবে নির্দিষ্ট করে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে এসএমই ঋণ পরিকল্পনার বিষয়ে নির্ধারিত জেলার ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য লিড ব্যাংক কনসোর্টিয়াম লিডার হিসেবে কাজ করবে।

ঋণ বিতরণের সার্বিক বিষয় সমন্বয় করার জন্য কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে বিসিক। তাদের মতে, প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ প্রদানের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিসিকের সাচিবিক সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংক, এফবিসিসিআই, নাসিব, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারের সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে একটি যাচাই-বাছাই ও বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে ঋণ বিতরণের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সব ব্যাংকের জেলা প্রধান, বিসিক, নাসিব, জেলা চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন ও অন্যান্য সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোট পাঁচটি ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। যার মধ্যে প্যাকেজ-২-এর আওতায় ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। ওই প্রণোদনা প্যাকেজটি ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের জন্য বিসিক এসব সুপারিশ প্রণয়ন করেছে।