সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘আমার নাম বদরুদ্দোজা। এর অর্থ হচ্ছে, ঘোর অন্ধকারে উজ্জ্বল পূর্ণ চন্দ্র। এই নামটিকে বিকৃত করে (অমুক কাকা) বলা সমীচীন হয়নি। এই নামটিকে ছোট করা উচিত না।’
রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি হোটেলে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী এসব কথা বলেন। বিকল্প স্বেচ্ছাসেবকধারার উদ্যোগে এ আলোচনা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘বদরুদ্দোজা নামটি আমাদের প্রিয় রাসুলের একটি সুন্দর পদবি। এই নামটি আমার নানা আমার জন্য রেখেছিলেন। পবিত্র কোরআনুল করিমে নাম বিকৃতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা স্মরণে রাখলে কৃতজ্ঞ থাকব। প্রধানমন্ত্রী, আপনি বয়সে আমার চেয়ে ছোট। তাই নাম বিকৃত করবেন না। জনগণও এটা পছন্দ করে না।’
ভারত সফর নিয়ে গত বুধবার (৩০ মে) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ‘বদু কাকা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন।
রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের দাবিকৃত (পরবর্তী সময়ে আমার সমর্থিত) তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করার প্রয়োজনে তাড়াহুড়া করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তা না হলে দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতো। ওই সময়ে আমার দল বিএনপি নির্বাচনকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য ব্যবহার করে নাই।’
ওই বিল পাস করার চার মাস পরেই সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় জানিয়ে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল অসম্পূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ এবং এটি অসংখ্য বিনা ভোটের সংসদ সদস্য সৃষ্টি করেছে। ওই নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান সরকার পাঁচ বছর কাটিয়ে দিল। বলা হচ্ছে, জাতীয় প্রয়োজনে এটা করতে হয়েছে। কিন্তু চার বছর পার হলেও নির্বাচন দেওয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সম্পর্কে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি বড় গলায় বলেছেন, ভারতকে যা দিয়েছি, সারা জীবন মনে রাখবে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কী দিয়েছেন? আপনি যখন দিয়েছেন, আপনিই তো জানেন, আর ভারত জানে, আমরা জানি না।’ তিনি আরও বলেন, কী কী নিলাম, এটা তো শোনা যায় না। তিস্তার পানি কই? মানুষ তো জানতে চায়।
প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছর ধরে বিরোধী দল চালাচ্ছেন মন্তব্য করে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান বলেন, ‘জামাই আদরের বিরোধী দল এটা। অ্যাঁ, মুরগির রানটা দাও, রুই মাছের মাথাটা দাও। খালি সরকারকে তেলই মারছে বিরোধী দল। এগুলো ঠিক না। আমরা বাংলাদেশে আইনের শাসন চাই।’
আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও রাজনৈতিক শিষ্টাচার নেই তাঁর মধ্যে। এমন তো হওয়ার কথা না। দেশের জনগণ পরিবর্তন চায়, দুর্নীতি চায় না। তারা চায় সুন্দর বাংলাদেশ।
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অভিযানের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা হচ্ছে। আপনারা বলছেন সব প্রমাণ আছে, তাহলে তাদের আদালতে পাঠান। আসলে তারা আদালতের ওপরেও আস্থা রাখতে পারছেন না।’
শুক্রবারের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, এখনো দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারছে না। এটা শিশু গণতন্ত্র। দেশে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। সরকারের সঙ্গে আছে স্বৈরশাসক। এটাই দেশের গণতন্ত্র।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিকল্প স্বেচ্ছাসেবকধারা বাংলাদেশের সভাপতি বি এম নিজাম উদ্দিন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা।