আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ শীর্ষ নেতাকে মনোনয়ন না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ যে নেতৃত্ব, তাঁরা সাধারণত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু এবার আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতের বিজেপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের মতো নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রেখেছেন।’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, এবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, আহম্মদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে থাকবেন। গতকাল তাদের ডেকে প্রধানমন্ত্রী কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, আরও দেবেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সবাই নির্বাচন করে না। ভারতের অনেকেই কিন্তু দলকে সহযোগিতা করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন না।
জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে বিচারের মুখে থাকা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। তারা জঙ্গিকে মনোনয়ন দেবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি বলেই মনোনয়ন পেয়েছেন। জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকেই তাদের (বিএনপি) মনোনয়ন পেয়েছেন। তারা এখনো ঘোষণা করেনি, তবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার যে তাঁরা মনোনয়ন পাবেন। তারা (বিএনপি) জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, এটা আমরা অনেক দিন আগে থেকে বলে আসছি। বিএনপি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক। এই পৃষ্ঠপোষকতার পরে তারা জঙ্গিকে মনোনয়ন দেবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি জানি না কী কারণ, কারণ তো আছে। সে কারণটা সত্য সত্যই। সেটা সময় মতো প্রকাশ হবে। আর কামাল হোসেনকে তো ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলা হচ্ছে। কিন্তু কে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন? এই প্রশ্নটার উত্তর আজও জানা যায়নি। মানুষ স্বাভাবিক কারণে মনে করেছিল, ড. কামাল হোসেনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। মানুষের সে ধারণার অবসান হলো। এখন কে ঐক্যফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার, এটা আবারও জানতে ইচ্ছে করছে। একটা দল, একটা জোট নির্বাচন করছে; সামনে কে কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’
বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কি না—জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘আমাদেরও তো আছে। আমরা আগে ভাগে আঁচ করতে পেরে কক্সবাজারের বদির মতো অনেককেই মনোনয়ন দিইনি। হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানাই। আপিল বিভাগও এই সিদ্ধান্তে অটল, এটাকে আমরা স্বাগত জানাই।’
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হতে পারে কি না—জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘হ্যাঁ, করতেই পারে। কারণ তারা তো নির্বাচনের এক মাস আগেও প্রধান নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তন চায়। এ ধরনের দাবি কি কোনভাবে যৌক্তিক? সেখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, তাঁরা কি আসলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, না কি নির্বাচন বানচাল করতে চায়? সাত, দশ বছরের দণ্ড নিয়ে বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এটা আদালত রায় দিয়েছেন। আদালতের রায়কে তো নির্বাচন কমিশনের মানতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাপা, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।