নর্থ সাইপ্রাস দেশটি ইউরোপের ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ১৯৭৪ সালে গ্রিক সাইপ্রাস থেকে তুরস্ক এ অংশটি কেড়ে নেয়। দেশটি সম্পূর্ণ আলাদা স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হলেও আন্তর্জাতিকভাবে কোনো দেশের কাছে এখনও এর স্বীকৃতি পায়নি। তিন হাজার ৯০০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে মাত্র তিন লাখ মানুষের বসবাস। তুর্কি সরকার শাসিত নর্থ সাইপ্রাস এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর কাছে তেমন পরিচিতি লাভ করতে পারেনি।
বাংলাদেশের মানুষও এ দেশটি সম্পর্কে তেমন অবগত না। কিন্তু কথায় আছে মাটি খুঁড়লেও বাঙালি পাওয়া যাবে। বাঙালি নেই এমন দেশ পাওয়া বিরল। তেমনি নর্থ সাইপ্রাসের মতো এই ছোট দেশেও তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশির বসবাস এটা হয়তো বাংলাদেশ সরকারেরও অজানা।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এখানে আসে। তার মধ্যে অর্ধেক আসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায়, বাকিরা স্টুডেন্ট ভিসায়। এ দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি বছর অসংখ্য স্টুডেন্ট নিয়ে আসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। এ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার মান অত্যন্ত ভালো এবং আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- বাংলাদেশিরা এ দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। তারা পড়ালেখার জন্য গেলেও ছয় মাস/এক বছর পর কেউ পড়াশোনা কন্টিনিউ করে না। বেশিরভাগই পার্শ্ববর্তী দেশ গ্রিক সাইপ্রাসে চলে যায়।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের সুনাম থাকলেও সেটা প্রায় ক্ষুণ্ন হওয়ার পথে। ব্যাচেলর শেষ করেছে এমন বাংলাদেশির সংখ্যা হাতেগোনা। মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছে মাত্র দুইজন।
ঠিক এমন সময় সালেহ আহমেদ ও শাহিনুর আক্তার দম্পতি নর্থ সাইপ্রাসে এক অনন্য রেকর্ড করেছেন। তারা দুজন একসঙ্গে গিরনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মাননার সঙ্গে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ১৮ জুন ইউনিভার্সিটি থেকে তাদেরকে সম্মাননা জানানো হয়। নর্থ সাইপ্রাসের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি দম্পতি একসঙ্গে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছে। নর্থ সাইপ্রাসে যেখানে প্রায় সবার কাছে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া অসম্ভব, সালেহ আহমদ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন।
সালেহ আহমদ ২০০৯ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন নর্থ সাইপ্রাসে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে ব্যাচেলর করার সময় তিনি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করে পড়াশোনার খরচ সংগ্রহ করতেন। পাশাপাশি বাড়িতেও টাকা পাঠাতেন। পড়াশোনা চালিয়ে নেয়াটা তার জন্য ছিল খুবই কষ্টের। তবে তিনি থেমে থাকেননি। অবশেষে সফলতার দেখা পান ২০১৪ সালে। ব্যাচেলর শেষ করার পর তিনি সাইপ্রাস আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন এবং সেখানে পড়াশোনা করা অবস্থায় অ্যাডমিশন রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অ্যাডমিশন অফিসে যুক্ত হন।
তিনি ২০১৮ সালে সাইপ্রাস আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন শেষ করে গিরনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করার ফলে তিনি সেখানে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্রাইসিস নিয়ে মাস্টার্সে থিসিস করেন। থিসিসে তিনি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের প্রভাব তুলে ধরেন।
সালেহ আহমেদ বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন নর্থ সাইপ্রাসের একটি আলোচিত নাম। তিনি বাংলাদেশি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নর্থ সাইপ্রাসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সালেহ আহমেদ নরসিংদীর আমিরগঞ্জ রায়পুরার সিরাজুল ইসলাম ও হোজাইফা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র।
শাহিনুর আক্তার ২০১৯ সালে নর্থ সাইপ্রাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তিনি শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাচেলর শেষ করে নর্থ সাইপ্রাসে পাড়ি জমান। তিনি সর্বোচ্চ সম্মান (একাডেমিক হাই-অনার) নিয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন। শাহিনুর শরীয়তপুরের আব্দুর রহমান ও হাসিনা বেগমের প্রথম মেয়ে।