মিজানুর রহমান সোহেল ,হবিগঞ্জ ॥ দিন মজুর পিতার বন্ধুর মাধ্যমে মোবাইল
ফোনের নাম্বার আদান প্রদান। সে সুবাধে পরিচয়ের এক পর্যায়ে গড়ে উঠে
প্রেম। আর এই মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্কের সুত্র ধরেই প্রেমিকের সাথে
দেখা করতে গিয়ে গণধর্ষনের শিকার হয়েছে এক তরুণী।
ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার রাতে নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের ইমামবাড়ী এলাকায়।
ধর্ষণের শিকার তরুণীর অভিযোগ, বিয়ের প্রলোভন দিয়ে প্রেমিক স্বপন তাকে
রাতে ডেকে এনে বন্ধুদের নিয়ে গণধর্ষন করেছে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ
ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার
পিতা উপজেলার কালিয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের করিয়া গ্রামের নিরানন্দ বিশ্বাস বাদি
হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দায়ের করেছেন।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার করিয়া গ্রামের
দিনমজুর নিরানন্দ বিশ্বাস ওয়ার্কসপ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা
নির্বাহ করে আসছেন। তার সাথে কাজ করতে গিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক হয়
পাশ্ববর্তী পুরানগাঁও গ্রামের আঃ করিমের পুত্র হামিদ মিয়ার। একে অপরের
বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত করতো। সেই সুবাধে নিরানন্দ বিশ্বাসের ১৯ বছর
বয়সী জনৈকা কন্যার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে হামিদ মিয়া নিয়ে দেয়
লহরজপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার সুন্দর আলীর পুত্র স্বপন মিয়া (২৪)কে। এক
পর্যায়ে হামিদ মিয়ার মাধ্যমে ওই তরুণী ও স্বপনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
স্বপন মিয়া নিজেকে হিন্দু পরিবারের ছেলে ও তার নাম স্বপন দাশ বলে জানায়
প্রেমিকা তরুণীকে। এরপর এভাবেই প্রায় ৩ মাস ধরে মোবাইল ফোনে চলে তাদের
প্রেমের সম্পর্ক। সম্প্রতি স্বপন মিয়া প্রেমিকার সাথে দেখা করতে মরিয়া হয়ে
উঠে।
এমনকি ওই তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে দেখা করতে
বলে। প্রেমিকের এমন প্রলোভনে দেখা করতে রাজি হয় প্রেমিকা। প্রেমিক স্বপনের
কথা মতো রাত ১০ টার সময় হামিদ মিয়া ওই তরুণীকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে
আসে ইমামবাড়ী বাজারস্থ স্বপনের বাড়ীর পাশের একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে।
সেখানে স্বপনের কাছে তরুণীকে রেখে চলে যায় হামিদ। প্রথমে স্বপন একা ধর্ষণ
করলেও পরে মোবাইল ফোনে ডেকে আনে তার বন্ধু দেবপাড়া গ্রামের মতিন মিয়ার
ছেলে মোশাহীদ মিয়া ও সমসু মিয়ার পুত্র সিএনজি চালক সুমন মিয়াকে।
রাত ২ টা পর্যন্ত তরুণীকে গণধর্ষণ করে স্বপন ও তার বন্ধুরা। একপর্যায়ে সেই হামিদ
মিয়া ওই পরিত্যক্ত ঘরে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী মুচি বাড়ি নামক
স্থানের এক বাড়িতে রেখে আসে। গতকাল বুধবার ভোরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি
জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গেলে তরুণী ঘটনার বর্ণনা দেয়। এ ঘটনার পর থেকেই
স্বপন ও তার বন্ধুরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরে স্থানীয় জনৈক এক আওয়ামীলীগ
নেতা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করনে। এমনকি তিনি মেয়েটিকে তার
পিতার নিকট সমজিয়ে দিয়ে বাড়িতে চলে যাওয়া জন্য সিএনজি অটোরিকশাতে
তুলে দেন। কিন্তু খবর পেয়ে সেই মূর্হুতেই ঘটনাস্থলে হাজির হন নবীগঞ্জ থানা
পুলিশ ও কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক। এরপর ধর্ষণের শিকার তরুণী কান্নাজরিত
কন্ঠে ঘটনার বর্ণনা দেয়। থানার ওসি (অপারেশন) উত্তম কুমার দাশের নেতৃত্বে এস
আই দেলোয়ার হোসেনসহ একদল পুলিশ পরে তরুণীকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনের
স্বাক্ষ্য গ্রহন করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে বিকেলে ধর্ষিতা তরুণীকে ডাক্তারী
পরীক্ষার জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় গতকাল
রাতে ধর্ষিতার পিতা নিরানন্দ বিশ্বাস বাদি হয়ে স্বপন মিয়া, হামিদ মিয়া,
মোশাহীদ মিয়া ও সুমনের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা
গেছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ওসি শেখ মোঃ সোহেল রানা জানান,
ভিকটিকমকে উদ্ধার করে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য হবিগঞ্জ আধনিক হাসপাতালে
পাঠানো হয়েছে।