নন্দনকাননেও পরাজয়ের বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশ

:
: ৮ মাস আগে

ইফতেখার আহমেদের করা অফের বলে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ তুলে দেন লিটন দাস। দ্রুত ৩ উইকেট পড়ার পর লিটনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সতীর্থের এমন আউটে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। লিটনের যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। পুরো বিশ্বকাপ যেন লিটনের আউটের প্রতিচ্ছবি।

 

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ মানেই যেন শুধু পরাজয়। প্রতি ম্যাচেই একই প্রতিচ্ছবি। বিব্রতকর ব্যাটিংয়ে কে কাকে ছড়িয়ে যাবে সেটারই যেন প্রতিযোগিতা চলে। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের দলকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বড় হার নিয়ে। পাশাপাশি প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো বাংলাদেশ।

ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জার্নিটা দুঃস্বপ্নের মতো। নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পর পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটের বড় পরাজয়।

 

আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৫.১ ওভারে অলআউট হয় বাংলাদেশ। তাড়া করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩২.৫ ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাবর আজমের দল।

হারতে থাকা পাকিস্তানের জন্য এই জয় হতে পারে বড় স্বস্তি। ডাচদের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর সাকিবদের জন্য এই হার আরও একটি ধাক্কা। সপ্তম ম্যাচে এসে তৃতীয় জয় পেলো পাকিস্তান। আর বাংলাদেশ ভরাট করলো হাফ ডজন হারের ধূসর বৃত্ত। চেন্নাই, পুনে মুম্বাই ঘুরে বড় স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেটের নন্দনকানন খ্যাত ইডেনে আসে বাংলাদেশ। লাল-সবুজের দলকে সমর্থন দিতে ছুতে গিয়েছিলেন বহু দর্শক। সাকিবদের হতশ্রী পারফরম্যান্সে তাদের ফিরতে হয়েছে হতাশ হয়ে। মাহমুদউল্লাহ-মিরাজদেরও ফিরতে হচ্ছে খালি হাতেই।

 

ব্যাটিংয়ে নেমে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে শূন্যরানে ফেরেন তানজীদ হাসান তামিম। নাজমুল হোসেন শান্ত (৪) এসে সাজঘরে ফেরেন উসামা মিরের দারুণ ক্যাচে। ২০ ম্যাচ পর ব্যাটিং অর্ডারে চারে এসে মুশফিকুর রহিম ধরতে পারেননি দলের হার। ৫ রানের হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে।

শুরু হয় লিটন-মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধ। দুজনে দেখেশুনে খেলছিলেন, সুযোগ পেলে হাঁকাচ্ছিলে বাউন্ডারি। যখন দুজনের ব্যাট কথা বলতে শুরু করেছে তখনি ছেদ পড়ে লিটনের আউটে। ৬৪ বলে ৬৫ রান করেন এই ব্যাটার। জুটি থেকে আসে ৭৯ রান।

লিটনের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ফিফটির পর বেশিদূর এগোতে পারেননি। ৫৬ রানে ফেরেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। অন্য প্রান্তে সাকিব খেলছিলেন দেখেশুনে। মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর তাওহীদ হৃদয় এসেই ছক্কা হাঁকিয়ে আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৩ বলে ৭ রান করে দলে প্রত্যাবর্তন রাঙাতে পারলেন না।

 

সাকিব এবার মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েন জুটি। দুজনে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলার চেষ্টা করছিলেন। সাকিব ইফতেখার আহমেদকে হ্যাটট্রিক চারে সুবাস দিয়েছিলেন বড় ইনিংসের। কিন্তু তাতে কী! ভাগ্য যে কথা বলছে না। রউফের শর্ট বলে ৪৩ রানে কাটা পড়লেন সাকিব। সাকিবের পর মিরাজও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। ৩০ বলে ২৫ রানে ফেরেন সাজঘরে। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় কোনোমতে ২০০ পার করে।

পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন শাহীন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম। ২ উইকেট নেন হারিস রউফ। ১টি করে উইকেট নেন ইফতেখার আহমেদ ও উসামা মির।

 

তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরু করে পাকিস্তান। দলে ফিরেই ৮১ রানের ইনিংস খেলে সুযোগ কাজে লাগান ফখর জামান। ৭৪ বলে ৩টি চার ও ৭টি ছয়ের মারে এই রান করেন তিনি। ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতে।

আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক করেন ৬৮ রান। দুজনের ওপেনিং জুটি থেকেই আসে ১২৮ রান। মাঝে বাবর আজম এসে ফেরেন ৯ রানে। এরপর দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতেখার আহমেদ। রিজওয়ান ২৬ ও ইফতেখার ১৭ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে ৩টি উইকেটই নেন মিরাজ।