নতুন স্বপ্ন বুনেছি জগন্নাথে এসে

:
: ২ years ago

শিক্ষাজীবনে প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনেই স্বপ্ন জাগে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাদ গ্রহণের। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সময় থেকেই রঙিন স্বপ্নকে মনের মধ্যে লালিত করতে থাকেন তারা। তবে পারিপার্শ্বিকতায় সেই স্বাদ গ্রহণের সুযোগ হয় না সবার। আবার অনেকের হয়৷এবছর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীদের অনুভূতি কেমন, তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা কী, এসব তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক রিদুয়ান ইসলাম।

স্বপ্ন যখন বাস্তব

এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিতান্তই কম, যে চায় না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই, কলেজে যাওয়া-আসার পথে যখন দেখতাম দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লাল, সাদা বাসগুলো যাচ্ছে, তখন খুব করে নিজের মধ্যে একটা সংকল্প তৈরি করি এই বাসে চড়তে হবে, আমাকেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। তখনকার স্বপ্ন আজ বাস্তব। আজ আমি জবিয়ান। আমি শুনতে পাই এটি আবেগের, উৎকণ্ঠার এবং গৌরবের, যা তুৃমি অর্জন করেছো, যা তুমি ছুঁতে পেরেছো।

মুশফিকুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগ

যেন পেয়েছি এক সোনার হরিণ

 

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়াকালীন সময়ের সব পরিশ্রম পূর্ণতা পেয়েছে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হওয়ার পর। যেদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিট লিস্ট প্রকাশিত হয়, সেদিন আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় একটি দিন। এক অদ্ভুত প্রশান্তি যেন আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো। বাবা-মা, শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মুখে গর্বের হাসি দেখে আমার উচ্ছ্বাস ও অনুপ্রেরণা বহুগুণ বেড়ে গেলো। সর্বদাই আমার দেশের উন্নতি ও মানুষের প্রগতির জন্য কাজ করার সদিচ্ছা ছিল, তবে সেই স্পৃহাটা এখন তেজী ঘোড়ার মতো ছুটছে। আমি নিজের মেধা ও শ্রমকে দেশের সমৃদ্ধি সাধনে ও মানুষের কষ্ট লাঘবে নিবেদন করতে চাই। সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে সুন্দর আগামী গড়তে চাই।

নাসরুম ফাতেহা ঐশী, আইন বিভাগ

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মননশীলতার বিস্তৃতি ঘটাতে চাই

 

পরিশ্রমী কিন্তু নিঃস্ব পথিক, রাজ্যসহ রাজসিংহাসন পেলে তার যেমন অনুভূতি হয়, তার চেয়েও শতগুণ ভালো লাগা কাজ করে একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পেরে। আমার সামনের পরিকল্পনা মূলত এমন যে, আমি একাডেমিক পড়াশোনা ঠিক রেখে কিছু সামাজিক উন্নয়নমূলক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে চাই, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের মননশীলতাকে সবার মাঝে তুলে ধরতে চাই। সর্বোপরি, সবার দোয়া ভালোবাসায় এগিয়ে যেতে চাই দৃষ্টির সীমানার বাইরে, ছিনিয়ে আনতে চাই সবার হৃদয়ের ভালোবাসা, নিজের ব্যবহার ও কর্মের মাধ্যমে।

মামুন হোসেন, দর্শন বিভাগ

জবি আমাকে পরিশ্রমের সার্থকতা দিয়েছে

গ্রামের মেঠো পথ বেয়ে পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়, গ্রামের মায়া ছেড়ে তোমার কাছে আশার কারণে একটা পদবী দিও বাড়ি ফিরে যেন অন্তত নিজের পরিচয়ের শেষে জুড়ে দিতে পারি। করোনার মাঝে এই দুর্বিষহ দিনগুলো পাড়ি দিয়ে এডমিশন প্রস্তুতি, তারপর আবার কতোই না বাধা পেরুতে হয়েছে। গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে স্বপ্ন ধরার চেষ্টা। অবশেষে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দখলে। নতুন বছরে জবির সঙ্গে পরিচয় হয়ে আমার প্রত্যাশা গ্রাম থেকে মেধাবী মুখগুলো যেন তাদের স্বপ্নসিঁড়ির গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে পারে। দিন শেষে তারা যেন সার্থক হয়ে বাড়ি ফেরে। পরিশ্রমগুলোও যেন সার্থক হয় এবং বাবা-মায়ের গর্বের কারণ হতে পারে।

আবু সুফিয়ান সরকার, সমাজকর্ম বিভাগ

অনুভূতির জাগরণ সমৃদ্ধির পথে

একসময় যাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করতো, মজা করতো, কে জানতো সেই অধম সুমন হয়ে উঠবে দেশের স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এমন এক জায়গা, যা একজন ছাত্রকে জীবনে সফল হতে একধাপ এগিয়ে নিয়ে দেয়। অবশ্য পাবলিকে চান্স পাওয়ার পূর্ব সময়টা ছিল অনেক প্রতীক্ষাময়, রাত জাগা যেন এক রুটিন, রাতের পর রাত দিনের পর দিন পড়ালেখা করা। বর্তমানে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের একজন ছাত্র, ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার। আশা করি এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে। আমার স্বপ্ন পূরণে সবার কাছে দোয়া চাই৷

মো. সুমন, আইন বিভাগ

বাস্তবে স্পর্শে আলোকিত এক টুকরো স্বপ্ন

পাবলিকিয়ান কে না হতে চায়!আমারও স্বপ্ন ছিল পাবলিকিয়ান হিসেবে এই সম্মানের খাতায় নাম লেখানোর। আর আমার এই স্বপ্নদ্রষ্টা আমার মামি। মামির কাছেই পাবলিকিয়ানদের গল্প শুনতাম। কষ্ট আর সফলতার গল্প। গল্পের আদলেই আমার মনে রঙিন স্বপ্নের উদয় হয়েছিল। তারপর থেকেই আমার স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় ছিলাম। পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আজ আমি গর্বিত জবিয়ান। আমি সেই সোনালি দিনের স্বপ্ন দেখি, যেদিন আমার জবি শুধু দেশসেরা নয় বরং বিশ্বমঞ্চে মাথা তুলে দাঁড়াবে। আমি সেই সোনালি দিনের সাক্ষী হতে চাই। আমি ক্যাম্পাসের দেয়ালে স্বপ্নিল ১৬ হিসেবে আলোকিত হতে চাই। আমি যেন দেশ এবং এই স্বপ্নেঘেরা প্রাঙ্গণকে নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারি, এটাই আমার প্রত্যাশা।

ওয়াফা সারতাজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

পরিশ্রম যেখানে সার্থক

স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তির পরেই স্বপ্ন জাগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। সেইসঙ্গে একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোজন৷ তারপর থেকেই শুরু হয় পড়াশোনার প্রতি প্রবল আবেগ। বাড়িয়ে দিলাম মনোযোগ। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর, মা-বাবার দোয়ায়, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় ও নিজের পরিশ্রমের ফল হিসাবে সুযোগ পেলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, সেদিনের অনুভূতি বলে প্রকাশ করার মতো নয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের এই সুযোগ পেয়ে এখন আমার স্বপ্ন আরও বেড়ে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালোভাবে পড়াশোনা করে দেশের ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করাই এখন আমরা লক্ষ্য।

আঁখি আক্তার বন্যা, ইতিহাস বিভাগ

নতুন স্বপ্ন বুনেছি জগন্নাথে এসে

ছোটবেলা থেকে আশেপাশের ভাই-আপুদের কাছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আনন্দ কেমন তা শুনে আসছিলাম। আর মনে মনে ভাবতাম আমিও কবে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হবো? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) আমাকে দিয়েছে স্বপ্ন দেখার সুযোগ, যে স্বপ্নগুলো মনে মনে এতদিন লালন করেছি, তা বাস্তবে রূপদান করার এইতো সুযোগ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া একটি স্বপ্নের মতো, তা আজ বাস্তব হয়েছে, বড় ভাইয়া-আপুদের পাবলিকে পড়ার কারণে তাদের জীবন কতটা সুন্দর আর গোছালো দেখছি, তা যে ভবিষ্যতে আমার মাঝেও হবে, ভেবে আনন্দ লাগছে। নিজেকে গুছিয়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে এখন জবির বুকে হাঁটতে চাই।

সাকিবুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগ

স্বপ্ন যেখানে নিশ্চিত

উচ্চ মাধ্যমিকের পরে সবার স্বপ্ন থাকে একটা মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর অধিকাংশরই স্বপ্ন থাকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার, অনেকের স্বপ্ন থাকে ভালো রেজাল্ট করে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা। আমার যে এমন কোনো ইচ্ছা নেই, এমনটা নয়। কিন্তু আমার ভবিষ্যতের মূল ইচ্ছা হচ্ছে মানুষের মতো মানুষ হয়ে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া। আমি চাই খুব ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষা করতে এবং নিজেকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিতে।

উদ্দীপ দে, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ