বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’কে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, ‘নতুন ফুল ফুটুক। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্যে আসুক। যারা নতুন প্ল্যাটফর্মে রাজনীতি করছেন, তাদের কার্যক্রমেই দেখা যাবে তারা আসলে কী চান!’
শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারায় নতুন রাজনৈতিক দল ও নতুন প্ল্যাটফর্মকে আওয়ামী লীগ অবশ্যই স্বাগত জানায়। আওয়ামী লীগ এর বিরুদ্ধে নয়।
‘১৯৭১ আর ২০১৯ এর জামায়াত এক নয়, জামায়াত এখন দেশপ্রেমিক’– অলি আহমদের এমন মন্তব্যের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, সেটা দেখতে হবে সরেজমিনে। তারা (জামায়াত) কী পরিবর্তিত রূপ নিয়ে এসেছে, তা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কতটা বিশ্বাস করে, সেটাও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হবে।
বরগুনায় রিফাত হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কোনো অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধীরা পালানোর চেষ্টা করে– এটাই স্বাভাবিক। তাই অপরাধীদের রাতারাতি গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। তবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ যাতে পালাতে না পারেন– সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
‘সুশাসনের অভাব ও বিচারহীনতার কারণে বরগুনার ঘটনা ঘটেছে’– বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিএনপি সরকারের সময়ই ছিল, এ সংস্কৃতি দিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছিল তারা। তাদের মুখে বিচারহীনতা ও আইনের শাসনের কথা মানায় না। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন দেশে আইনের শাসন কতটুকু ছিল– সেটা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কেউ অপরাধ করে পার পায় না। অপরাধ করে সরকারি দলের এমপিও কারাগারে আছেন। সুতরাং বর্তমান সরকারের সময় অপরাধ করলে তার শাস্তি পেতেই হবে।
আগামী ১ জুলাই থেকে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের জন্য জেলা-উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হবে। আর যারা আগে থেকেই আছেন তাদের নবায়ন করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিচয়কে বড় করে না দেখে নতুন সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয়কেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাকে সদস্য করা হবে, তার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখা হবে। তার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কি-না, সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে জড়িত কি-না, এ বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া তার বাবা-মা এমনকি একেবারে নিকটাত্মীয়দের বিষয়টাও দেখা হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্মেলন না করার কোনো বিকল্প নেই। তাই সম্মেলন পেছানোরও কোনো সুযোগ নেই।
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সৃষ্ট সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রলীগে যে সংকট তৈরি হয়েছে এর সমাধান তার কাছে নেই। ছাত্রলীগের ব্যাপারে চারজন সহকর্মীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব দিয়েছেন। ছাত্রলীগ সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই তার জবাব দেবেন।
এই চার নেতা ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা সফল কী ব্যর্থ, তার বিচার প্রধানমন্ত্রী করবেন। তিনি (কাদের) অসুস্থ হয়ে বিদেশ ছিলেন। এ বিষয়ে অনেক কিছুই তার জানা নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই ভালো বলতে পারবেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বি এম মোজাম্মেল হক।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এ কে এম এনামুল হক শামীম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মারুফা আক্তার পপি, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।