বিপুল বিজয়ের পর নতুন মন্ত্রিসভায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আরও বেশিসংখ্যক মন্ত্রী নিয়োগের দাবি উঠেছে। শাসক দল আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপে এ দাবি-দাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
কারা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন, তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে বরিশালের রাজনীতির মাঠে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন তারাই, যারা একাধিকবার এমপি হয়েছেন।
তবে এ আলোচনায় উঠে এসেছে জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের নাম। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামিম সাঈদীকে হারিয়ে বিজয়ী হন
। তবে কারা মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন, সেটি একান্তই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার একক এখতিয়ার। বর্তমানে বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা এবং পিরোজপুরে ৪ মন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী রয়েছেন।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের চারজন এবং একজন মহাজোটের শরিক জেপির (মঞ্জু) নেতা। এছাড়া বরিশাল-১ আসনের চারবারের এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ক পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক পদে আছেন।
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ভাগ্নে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় আবদুল্লাহকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার দাবি উঠেছে এলাকায়।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট পিতা-মাতা-সন্তান হারানো হাসানাত আওয়ামী লীগের দক্ষিণাঞ্চলকে আগলে রেখেছেন। আওয়ামী লীগকে ঘিরেই তার স্বপ্ন।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের পরই তার পরিবারের মতো এত কষ্ট দুর্ভোগ কেউ সহ্য করেনি।
বরিশাল জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগ তথা বরিশাল অঞ্চলের সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি তাকে যেন কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে চারবারের এমপি আমির হোসেন আমু এখন শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বে। নতুন মন্ত্রিসভায়ও তাকে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বে রাখার দাবি ঝালকাঠি-২ আসনের আওয়ামী লীগ নেতাদের।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, আওয়ামী লীগের বহু ক্রান্তিলগ্নের কাণ্ডারিদের একজন আমু। বর্ষীয়ান এই নেতা এখনও সমানতালে যেমন ধরে রেখেছেন দল, তেমনি তার বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পার হয়ে যাই আমরা। আমরা এ ব্যাপারে জননেত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি- তাকে যেন মন্ত্রী পদে বহাল রাখা হয়।
মন্ত্রী পদে বহাল রাখার দাবি রয়েছে ভোলা-১ আসনের এমপি বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদকে। ভোলার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতারাও বিশ্বাস করেন যে, বিশ্বস্ত সিপাহশালাদের মতো এখন যেমন আছেন, তেমনি একাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায়ও প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকবেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জেপির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান পানিসম্পদমন্ত্রী পাঁচবারের এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবারও নির্বাচিত হয়েছেন পিরোজপুর-২ আসন থেকে। তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিঞার যোগ্য উত্তরসূরি মঞ্জুকে এবারও মন্ত্রী চান এলাকাবাসী।
এছাড়া ভোলা-৪ আসনের এমপি বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে এলাকায়। পিতা সাবেক এমপি প্রয়াত অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের পথ ধরে রাজনীতিতে আসা এই আওয়ামী লীগ নেতার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা উন্নয়ন।
নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। পর্যটনের নতুন ঠিকানা জ্যাকব টাওয়ার সারা দেশেই এখন প্রশংসিত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় একের পর এক মামলায় ছযবার গিয়েছেন জেলে।
চরফ্যাশনের সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, এই এলাকায় অনেকেই এমপি ছিলেন কিন্তু জ্যাকবের মতো উন্নয়ন আর কেউ করতে পারেননি। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি জ্যাকবকে যাতে উপমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়।
এবারই প্রথম এমপি হওয়া নেতাদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই হওয়া প্রশ্নে সবচেয়ে যিনি বেশি আলোচিত তিনি পিরোজপুর-১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম। পেশাগত জীবনের প্রথমদিকে একটি প্রতিষ্ঠিত দৈনিকের সংবাদকর্মী ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনেও বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে তার।
খুলনার দৌলতপুর কলেজ এবং সরকারি কৃষি কলেজের ভিপি ও জিএস ছিলেন। ২০০৯ সালে নির্বাচিত হন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল ওয়ান-ইলেভেনকালীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তার মুক্তি পর্যন্ত পালন করেন নেত্রীর আইনজীবীর দায়িত্ব।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ হাকিম হাওলাদার বলেন, তার মতো একজন গুণী মানুষকে জননেত্রী যোগ্য দায়িত্ব দেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। তাছাড়া বহু বছর এ পিরোজপুরে কোনো মন্ত্রী নেই। পিরোজপুরের আপামর জনসাধারণের পক্ষ থেকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি শ ম রেজাউল করিমকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেয়ার।
এছাড়া জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া এবং সাবেক উপমন্ত্রী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকেও পূর্ণমন্ত্রী করার দাবি উঠেছে তাদের নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালী-২, পটুয়াখালী-১ এবং বরগুনা-১ থেকে।